Primary TET Scam – 36000 শিক্ষকের চাকরি বাতিল, কোন শর্তে চাকরি বাঁচতে পারে?
পশ্চিমবঙ্গ প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ ২০১৪ সালে প্রাথমিক টেট বিজ্ঞপ্তি জারি করে ২০১৭ সাল থেকে জয়েনিং লেটার দেওয়া শুরু করে। আর তখন থেকেই Primary TET Scam বা শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। হাইকোর্টে মামলা দায়ের হয়। আর একাধিক মামলা ও বহু ঘটনা প্রবাহের শেষে দীর্ঘ ৬ বছর পর গতকাল ৩৬ হাজার শিক্ষকের চাকরি বাতিলের নির্দেশ দেয়। অর্থাৎ ৪২৫০০ শিক্ষকের মধ্যে ৩৬০০০ শিক্ষকের নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়ম মেনে হয়নি বলে আদালতের পর্যবেক্ষণ। যদিও এই রায়ের ভেতরে দ্বিমত রয়েছে, আর স্বভাবতই দ্বিধাবিভক্ত চাকরি প্রার্থী, শিক্ষক শিক্ষিকা, পর্ষদ তথা সরকার।
Primary TET Scam মামলার রাজ্যের সারমর্মঃ
টেট ২০১৪ তে প্রায় ৪২৫০০ প্রাথমিক শিক্ষক নিযুক্ত হন। আর তারমধ্যে ৩৬০০০ শিক্ষক তখন অপ্রশিক্ষিত বা DLEd শিক্ষক প্রশিক্ষণ ছিলো না। আর এই নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অনিয়মের প্রমান পাওয়া গেছে, এই অভিযোগে বিশেষ করে পারসোনালিটি টেস্ট এ নিয়ম না মেনে নম্বর দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। তাই Primary TET Scam মামলায় ৩৬০০০ অপ্রশিক্ষিত শিক্ষকের চাকরি বাতিল করা হয়েছে। আর সেখানে তাদের ৪ মাস সময় দেওয়া হয়েছে।
এই ৪ মাস তারা প্রশিক্ষিত হয়ে আবার ইন্টারভিউতে বসতে পারবে। আর এই ৪ মাস তারা পার্শ্ব শিক্ষকের বেতন অনুযায়ী বেতন পাবেন। আগামী ৩ মাসের মধ্যে পর্ষদ এই শুন্যপদে ফের নিয়োগ করতে পারে। সেখানে টেট পাশ প্রশিক্ষিত ফ্রেশ প্রার্থীরা আবেদন করতে পারবে। পর্ষদ চাইলে এই নিয়োগ প্রক্রিয়ায় আবেদনের জন্য টাকা বা ফিস চাইতে পারে। এছাড়া তৎকালীন পর্ষদ সভাপতি মানিক বাবুর কাছ থেকে ও টাকা তোলা যেতে পারে।
পর্ষদের প্রতিক্রিয়াঃ
২০১৪ এর বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী প্রশিক্ষিত ও অপ্রশিক্ষিত প্রার্থীরা সকলেই আবেদনের যোগ্য ছিলেন। এবং পর্ষদ সভাপতি মনে করেন, যারা টেট পাশ করে ইন্টারভিউ এবং কাউন্সেলিং এর মাধ্যমে নিয়োগ পেয়েছেন, তাদের পর্ষদ অযোগ্য বলতে পারেন না। সুতরাং আদালতের এই রায় নিয়ে ডিভিশন বেঞ্চে চ্যালেঞ্জ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে পর্ষদ (WBBPE). যার জেরে গতকালই আইনী পরামর্শ ও জরুরী বৈঠক সম্পন্ন হয়েছে। এবং প্রয়োজনে Primary TET Scam মামলার রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে যাওয়ার জন্য ও পর্ষদ প্রস্তুত।
প্রাথমিক শিক্ষকদের প্রতিক্রিয়াঃ
২০১৭ সালে নিযুক্ত প্রাথমিক শিক্ষকদের একাংশ আদালতের রায়ের উল্টে যে প্রশ্ন তুলেছেন তা একেবারে ফেলে দেওয়ার মতো নয়।
প্রথমত, টেট ২০১৪ এর বিজ্ঞপ্তিতে প্রশিক্ষিত ও অপ্রশিক্ষিত সকলের ই আবেদন করার সুযোগ ছিলো। এবং NCTE এর নিয়ম অনুযায়ী সারা দেশের শিক্ষকদের ২০১৯ সালের ৩১শে মার্চের মধ্যে প্রশিক্ষিত হওয়ার নির্দেশ দিয়েছিল। আর ODL মোড এর মাধ্যমে সকল শিক্ষক NCTE এর নিয়ম মেনে প্রশিক্ষণ নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই সম্পন্ন করেছে। তাই তারা অযোগ্য নন।
এছাড়া ওই প্যানেলের প্রশিক্ষিত প্রার্থীদের মেরিট লিস্টে অতিরিক্ত নম্বর দেওয়া হয়েছিল। এবং নিয়োগ পাওয়ার পরও তারা ফুল গ্রেড পে, এবং বেশি বেসিক নিয়ে চাকরিতে যোগদান করেছিল। সুতরাং আদালত শুধুমাত্র অপ্রশিক্ষিত দের নিয়োগ বাতিলের নির্দেশ দিতে পারেনা, কারন তারা আর অপ্রশিক্ষিত নেই। আর শুধুমাত্র অপ্রশিক্ষিতদের ক্ষেত্রেই দুর্নীতি হয়েছে, এরুপ কোনও আলাদা প্রমান বা নথি আদালতের সামনে আসেনি। তাই Primary TET Scam মামলায় শুধুমাত্র তৎকালীন অপ্রশিক্ষিত প্রার্থীরাই কেন চাকরি হারাবে?
এই রায় অনুযায়ী কাদের চাকরি বাঁচবে?
টেট ২০১৪ এর প্যানেলে যারা ট্রেন্ড হিসেবে জয়েন করেছেন, তাদের কোনও সমস্যা নেই। যারা আন্ট্রেন্ড বা অপ্রশিক্ষিত হয়ে জয়েন করেছেন তারা যদি এখনও অপ্রশিক্ষিত থাকেন তবে তাদের চাকরি বাতিল। আর যারা ট্রেনিং শেষ করেছেন, তাদের আগামী ৪ মাসের মধ্যে ফের ইন্টারভিতে বসলে, এবং সেখানে পাশ করলে, চাকরি বেঁচে যাবে। তবে তিনি যে স্কুলে চাকরি করছেন সেখানে চাকরি পাবেন কিনা সেই নিশ্চয়তা নেই। এবং এই চার মাস তিনি পার্শ্ব শিক্ষকের সমান বেতন পাবেন।
সামগ্রিক পর্যবেক্ষণঃ
প্যানেলের প্রাথমিক শিক্ষকেরা ইতিমধ্যেই আইনি পরামর্শ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এদিকে রাজ্য সরকার ও প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ ও এই রায় কে চ্যালেঞ্জ জানিয়েছে। রাজনৈতিক ভাবে একাধিক মিশ্র প্রতিক্রিয়া থাকলেও ভারতীয় সংবিধান ও একজন নিরপরাধীকে শাস্তি দেওয়ার বিরুদ্ধে। তাই Primary TET Scam মামলায় যেহেতু পুরো ৩৬০০০ প্রার্থীই দুর্নীতির মাধ্যমে নিয়োগ হয়েছে, এরূপ প্রমান না মেলায়, এখনই আশাহত হচ্ছেন না ভুক্তভোগী প্রাথমিক শিক্ষকেরা।
সকলেরই উচ্চ আদালতে যাওয়ার সুযোগ রয়েছে। আর স্বাধীন ভারতে ৩৬০০০ শিক্ষক তথা কোনও কর্মীর চাকরি গেছে বলে এমন দৃষ্টান্ত মেলেনি। এবার উচ্চ আদালত কি সিদ্ধান্ত দেয় সেটাই এখন দেখার। আর ৩৬০০০ শিক্ষক নয়, আর Primary TET Scam মামলায় তারা সকলেও দোষী নয়, একথা যেমন সত্যি, তেমনি সেই ৩৬০০০ শিক্ষকের সাথে জড়িয়ে রয়েছে ৩৬০০০ পরিবারের জীবন, সেটাও ভাবনার বিষয়।
আর এমন সময় যেন মনে করিয়ে দিচ্ছে সেই কবিতাটি,
“দণ্ডিতের সাথে
দণ্ডদাতা কাঁদে যবে সমানে আঘাতে
সর্বশ্রেষ্ঠ সে বিচার।“