আবেদন করুন স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পে এবং পেয়ে যান ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত স্বাস্থ্য বীমার সুবিধা
পশ্চিমবঙ্গ সরকারের তরফে সমগ্র পশ্চিমবঙ্গবাসীর জন্য যেসমস্ত প্রকল্পগুলির আয়োজন করা হয়েছে তার মধ্যে অন্যতম উল্লেখযোগ্য প্রকল্প হলো স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্প কিংবা স্বাস্থ্যসাথী কার্ড। এই প্রকল্পের অধীনে থাকা সমস্ত পরিবারকে চিকিৎসার খরচ হিসেবে রাজ্য সরকারের তরফে প্রতি বছর ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত অনুদান দেওয়া হয়ে থাকে। এই প্রকল্পের অধীনে বিভিন্ন সাধারণ রোগের পাশাপাশি নানা প্রকার জটিল রোগের চিকিৎসাও হয়ে থাকে। বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গ এবং পশ্চিমবঙ্গের বাইরে প্রায় ২০০০ হাসপাতালে স্বাস্থ্যসাথী কার্ডের অধীনে পশ্চিমবঙ্গবাসীকে চিকিৎসা প্রদান করা হয়ে থাকে।
তবে আপনি কি জানেন কারা স্বাস্থ্যসাথী কার্ডের জন্য আবেদনের যোগ্য? কিংবা কিভাবে স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পের অধীনে আপনার নাম নথিভুক্তকরণের জন্য আবেদন করবেন? এ ব্যাপারে যদি আপনি না জেনে থাকেন তবে আজকের এই খবরটি আপনার জন্য। আজ আমরা এই পোস্টে আপনাদের জন্য স্বাস্থ্যসাথী কার্ড সংক্রান্ত সমস্ত বিস্তারিত তথ্য নিয়ে হাজির হয়েছি।
চলুন তবে জেনে নেওয়া যাক স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পের অধীনে আপনারা কি কি সুবিধা পেতে চলেছেন?
১. স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পের অধীনে প্রত্যেক পরিবারকে স্বাস্থ্য বীমা প্রদান করা হবে রাজ্য সরকারের তরফে।
২. স্বাস্থ্যসাথী কার্ডের অধীনে থাকা একটি পরিবারকে ৫ লক্ষ টাকার চিকিৎসার সুবিধা প্রদান করা হবে। এক্ষেত্রে প্রাথমিক স্বাস্থ্য সুরক্ষা হিসেবে সর্বোচ্চ ১ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত পাওয়া যাবে এবং জটিল কোনো রোগের ক্ষেত্রে সেই রোগের চিকিৎসার খরচ অনুসারে খরচ পাওয়া যাবে।
৩. যেসকল ব্যক্তিদের কিংবা পরিবারের স্বাস্থ্যসাথী কার্ড রয়েছে তারা হাসপাতালে চিকিৎসার কারণে ভর্তি থাকাকালীন ওষুধ, খাবার থেকে শুরু করে বিভিন্ন রকমের টেস্ট এবং চিকিৎসা সম্পূর্ণ বিনামূল্যে পাবেন।
৪. কোনো জটিল রোগের কারণে যদি স্বাস্থ্যসাথী কার্ড রয়েছে এরূপ কোনো ব্যক্তিকে হাসপাতালে ভর্তি হতে হয় তবে হাসপাতালে ভর্তির আগে এবং হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাওয়ার পাঁচ দিন পর্যন্ত বিনামূল্যে ওষুধ দেওয়া হবে। এর পাশাপাশি হাসপাতালে যাওয়া এবং আসার ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় খরচ হিসেবে রোগীকে অতিরিক্ত ২০০ টাকা প্রদান করা হবে।
৫. স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পের অধীনে টাকা পাওয়ার জন্য কেবলমাত্র স্বাস্থ্যসাথী কার্ড থাকলেই হবে, এর জন্য আলাদা করে কোনো ডকুমেন্টস এর প্রয়োজন হয় না।
বিপুল সংখ্যক শূন্যপদে স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ায় কর্মী নিয়োগ করা হবে, আজই আবেদন করুন
স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পের অধীনে কারা বিনামূল্যে চিকিৎসার সুযোগ পাবেন?
১. আবেদনকারী ব্যক্তিকে অবশ্যই পশ্চিমবঙ্গের স্থায়ী বাসিন্দা হতে হবে।
২. আবেদনকারী ব্যক্তি যেকোন ক্ষেত্রের কর্মী হতে পারেন। তবে যে সকল ব্যক্তিদের আগে থেকেই কোন বেসরকারি ক্ষেত্রে স্বাস্থ্য বীমা করা রয়েছে তারা এই প্রকল্পের সুবিধা পাবেন না।
৩. কেন্দ্রীয় সরকার এবং রাজ্য সরকারের অধীনস্থ যেসমস্ত কর্মীরা আগে থেকেই নানা প্রকার স্বাস্থ্য বীমার সুবিধা পেয়ে থাকেন তারা এই প্রকল্পের অধীনে নিজেদের নাম নথিভুক্ত করতে পারবেন না। তবে যে সমস্ত সরকারি কর্মচারীরা কোনো স্বাস্থ্য বীমার সুবিধা পান না তারা এই প্রকল্পের অধীনে স্বাস্থ্য সাথী কার্ডের জন্য আবেদন করতে পারবেন।
৪. যেকোনো পরিবারে ১৮ বছর বা তার ঊর্ধ্বে যেসমস্ত সদস্য রয়েছে তারা এই প্রকল্পের অধীনে নিজেদের নাম নথিভুক্ত করতে পারবেন।
স্বাস্থ্য সাথী কার্ডের জন্য কিভাবে আবেদন করবেন?
পশ্চিমবঙ্গের নাগরিকদের সুবিধার জন্য রাজ্য সরকার সমস্ত কিছুই ডিজিটাল করার দিকে ঝুঁকেছে। আর তাই এখন রেশন কার্ড হোক কিংবা স্বাস্থ্যসাথী কার্ড যেকোনো কিছুর জন্য আপনি বাড়িতে বসেই অনলাইনে আবেদন করতে পারবেন। স্বাস্থ্যসাথী কার্ডের জন্য আবেদনের ক্ষেত্রে আপনাকে কতোগুলি সহজ পদ্ধতি অবলম্বন করতে হবে। এই পদ্ধতিগুলি হলো:-
১. এজন্য প্রথমেই আপনাকে স্বাস্থ্যসাথী কার্ডের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট https://swasthyasathi.gov.in/ -এ যেতে হবে।
২. এরপর আপনাকে হোম পেইজে থাকা মেনুবারে ক্লিক করতে হবে। মেনুবারে ক্লিক করলেই আপনার সামনে অনেকগুলি অপশন আসবে যার মধ্যে থেকে আপনাকে Apply Online অপশনটি বেছে নিতে হবে।
৩. উপরোক্ত অপশনে ক্লিক করলে আপনার সামনে আরো অনেকগুলি অপশন আসবে যার মধ্যে থেকে আপনাকে Online Application for Swasthya Sathi Card অপশনটি বেছে নিতে হবে।
৪. এরপর আপনার সামনে যে নতুন পেজটি আসবে তাতে সঠিক স্থানে আপনাকে আপনার বৈধ মোবাইল নম্বরটি লিখতে হবে এবং Get OTP অপশনটিতে ক্লিক করতে হবে। উপরোক্ত অপশনে ক্লিক করলে আপনার ফোনে একটি OTP আসবে, ওই OTP টি সঠিক স্থানে আপনাকে লিখতে হবে এবং submit অপশনে ক্লিক করতে হবে।
৫. উপরোক্ত প্রক্রিয়াগুলি সঠিকভাবে সম্পন্ন করলে আপনার সামনে স্বাস্থ্যসাথী কার্ডের জন্য আবেদনের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় ফর্মটি (FORM B) চলে আসবে। ওই ফর্মে আপনার জেলা মিউনসিপ্যালিটি / গ্রাম পঞ্চায়েত, ব্লক, গ্রামের নাম সঠিকভাবে নির্বাচন করতে হবে। এরপর আপনি কোন ক্ষেত্রে কাজ করেন, সেখানকার ঠিকানা সঠিকভাবে উল্লেখ করতে হবে।
৬. এরপর আবেদনকারীর নাম, পিতা অথবা স্বামীর নাম, তার ধর্ম, তিনি কোথাও কর্মরত কিনা, খাদ্যসাথী আইডি সহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় তথ্যগুলি উল্লেখ করতে হবে। এরপর আবেদনকারীর পরিবারে যতোজন সদস্য রয়েছে তাদের সকলের নাম এমপ্লয়মেন্ট স্ট্যাটাস, লিঙ্গ, বয়স, খাদ্যসাথী আইডি এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় তথ্যগুলি উল্লেখ করতে হবে।
৭. সমস্ত তথ্য সঠিকভাবে পূরণ করা হলে submit অপশনে ক্লিক করতে হবে। সাবমিটের প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন হলে আপনার সামনে একটি রেজিস্ট্রেশন আইডি দেওয়া হবে সেটি পরবর্তীকালের জন্য সংগ্রহ করে রাখতে হবে।
এছাড়াও আপনারা দুয়ারে সরকারের ক্যাম্প থেকে স্বাস্থ্যসাথী কার্ডের জন্য আবেদনের ফর্মটি পেয়ে যাবেন। আপনারা যদি অফলাইনে ফর্মটি পূরণ করতে চান তবে দুয়ারে সরকারের ক্যাম্পে গিয়ে ফর্মটি সংগ্রহ করে সমস্ত তথ্য সঠিকভাবে পূরণ করে জমা দিতে হবে। অনলাইন হোক কিংবা অফলাইন উভয় ক্ষেত্রেই আপনার আবেদনটি রাজ্য সরকারের তরফে অ্যাপ্রুভ করা হলে আপনাকে এবং আপনার পরিবারে অন্যান্য যে সদস্যদের নাম আপনি নথিভুক্ত করেছেন তাদের সকলকে নির্দিষ্ট দিনে নির্দিষ্ট জায়গায় ডাকা হবে। ওই দিনই আপনার এবং আপনার পরিবারে অন্যান্য সদস্যদের ছবি তোলা হবে এবং স্বাস্থ্যসাথী কার্ডটি আপনি ওইদিন হাতে পেয়ে যাবেন।