কন্যা সন্তানের পড়াশোনার খরচ নিয়ে চিন্তিত? আবেদন করুন বালিকা সমৃদ্ধি যোজনায়
যেকোনো সুস্থ সমাজ গড়ে তোলার ক্ষেত্রে পুরুষদের পাশাপাশি মহিলাদের অবদানও অবিস্মরণীয়। বর্তমানে যুগের সাথে তাল মিলিয়ে ছেলেদের পাশাপাশি মেয়েরাও বিভিন্ন ক্ষেত্রে যথেষ্ট এগিয়ে রয়েছে, তা সে চাকরি হোক কিংবা পড়াশোনা অথবা ব্যবসা। তবে এখনও ভারতের বিভিন্ন প্রত্যন্ত অঞ্চলে কন্যাসন্তানকে বোঝা মনে করা হয়। বিভিন্ন প্রত্যন্ত গ্রামে নানাবিধ সংস্কারের বশবর্তী হয়ে মানুষ আজও মেয়েদের শিক্ষা সম্পূর্ণ হওয়ার আগেই বিয়ে দিয়ে দেন। আর এই বাল্যবিবাহ বন্ধ করা থেকে শুরু করে মেয়েদের মৌলিক অধিকার প্রদানের জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে বিভিন্ন প্রকার প্রকল্প কার্যকরী করা হয়েছে। ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে কার্যকরী এমনই একটি উল্লেখযোগ্য প্রকল্প হলো বালিকা সমৃদ্ধি যোজনা।
এই যোজনাটি প্রথম কার্যকরী করা হয়েছিলো ১৯৯৭ সালের ২রা অক্টোবর তারিখে। মূলত ভারতের বিভিন্ন প্রত্যন্ত অঞ্চলের মেয়েরা যাতে তাদের পড়াশোনা সম্পূর্ণ করতে পারে এবং নিজেদের ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত করতে পারে তার জন্যই এই যোজনা কার্যকরী করা হয়েছিলো। এর পাশাপাশি কন্যা সন্তানের প্রতি তার পরিবার এবং সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করাও এই যোজনার আরও একটি মূল উদ্দেশ্য। এছাড়াও বিভিন্ন স্কুলে ছাত্রীদের সংখ্যা বৃদ্ধি এবং বাল্যবিবাহ রোধ করাও এই যোজনাটির উদ্দেশ্যগুলির মধ্যেই রয়েছে। তবে ভারতের প্রচুর কম সংখ্যক মানুষই ১৯৯৭ সালে কার্যকরী এই যোজনাটি সম্পর্কে জানেন। আর তাই আজ আমরা বালিকা সমৃদ্ধি যোজনার অধীনে একজন কন্যাসন্তান কি কি সুবিধা পেয়ে থাকে, এই যোজনার অধীনে কিভাবে কন্যা সন্তানের নাম নথিভূক্ত করা সম্ভব, নাম নথিভুক্তকরণের ক্ষেত্রে কি কি নথিপত্র প্রয়োজন তার সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য নিয়ে হাজির হয়েছি।
১. বালিকা সমৃদ্ধি যোজনার অধীনে ১৯৯৭ সালের ১৫ই আগস্ট এর পরে জন্মানো কন্যা সন্তানদের অনুদান প্রদান করা হয়ে থাকে। এই যোজনার অধীনে যেকোন কন্যা সন্তানকে তার জন্মের পরই ৫০০ টাকা অনুদান প্রদান করা হয়ে থাকে।
২. এর পাশাপাশি এই যোজনার আওতায় থাকা কন্যা সন্তানদের তাদের স্কুলে পড়াশোনা চলাকালীন প্রত্যেক বছর একটি নির্দিষ্ট অংকের টাকা বৃত্তি হিসেবে প্রদান করা হয়ে থাকে। এক্ষেত্রে প্রথম, দ্বিতীয় এবং তৃতীয় শ্রেণীতে পাঠরত কন্যা সন্তানদের প্রতি বছর ৩০০ টাকা করে বৃত্তি প্রদান করা হয়ে থাকে। চতুর্থ শ্রেণীতে পাঠরত ছাত্রীদের প্রত্যেক বছর বৃত্তি হিসেবে ৫০০ টাকা করে দেওয়া হয়ে থাকে। পঞ্চম শ্রেণীতে বার্ষিক বৃত্তি হিসেবে ছাত্রীদের ৬০০ টাকা দেওয়া হয়ে থাকে। ষষ্ঠ এবং সপ্তম শ্রেণীতে পাঠাতে ছাত্রীদের বার্ষিক বৃত্তি হিসেবে ৭০০ টাকা দেওয়া হয়ে থাকে। অষ্টম শ্রেণীতে পড়াশুনা চলাকালীন ছাত্রীদের ৮০০ টাকা করে দেওয়া হয়। নবম এবং দশম শ্রেণীতে পাঠরত ছাত্রীদের ১০০০ টাকা করে অনুদান প্রদান করা হয়ে থাকে।
এই যোজনার অধীনে যেসমস্ত ছাত্রীদের নাম নথিভুক্ত রয়েছে তাদের বৃত্তির টাকা প্রত্যেক বছর তাদের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ট্রান্সফার করা হয়ে থাকে। যদিও এই যোজনার অধীনে কোন ব্যাংকে কিংবা পোস্ট অফিসে ছাত্রীদের অ্যাকাউন্ট ওপেন করা হবে তার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় রাজ্য সরকারের তরফে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই যেসমস্ত ব্যাংকে কিংবা পোস্ট অফিসে যথেষ্ট বেশি হারে সুদ পাওয়া যায় সেই সমস্ত ব্যাংক কিংবা পোস্ট অফিসে উক্ত কন্যাসন্তানের অ্যাকাউন্ট ওপেন করা হয়ে থাকে। ১৮ বছরের আগে কোনোভাবেই এই টাকা তোলা সম্ভব নয়।
কন্যাসন্তানের ১৮ বছর বয়স হলে এবং সে যদি অবিবাহিত থাকে তবেই একমাত্র এই টাকা পাওয়া সম্ভব। যদিও এক্ষেত্রে কন্যাসন্তান যে অবিবাহিত তার প্রমাণ স্বরূপ গ্রাম পঞ্চায়েত কিংবা পুরসভার কাছ থেকে শংসাপত্র সংগ্রহ করা প্রয়োজন। এই শংসাপত্র ব্যাংক কিংবা পোস্ট অফিসের কাছে জমা দিলে তবেই সেই ব্যাংক কিংবা পোস্ট অফিসের পক্ষ থেকে কন্যাসন্তানকে বালিকা সমৃদ্ধি যোজনার টাকা দেওয়া হবে।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য ১৮ বছরের নিচে যদি কোনো কন্যাসন্তানের বিয়ে হয়ে যায় তবে সে কোনোভাবেই বালিকা সমৃদ্ধি যোজনার টাকা পাবে না। কোন ক্ষেত্রে যদি ১৮ বছরের পূর্বে কোনো কন্যা সন্তানের মৃত্যু হয়ে থাকে তবে তার ভাগের টাকা এই যোজনার অধীনে থাকা অন্যান্য মেয়েদের দেওয়া হয়ে থাকে।
কারা এই যোজনা সুবিধা পাবেন?
১. ভারতের যেকোনো প্রত্যন্ত গ্রামের কন্যাশিশু থেকে শুরু করে যেকোন উন্নত শহরের কন্যাশিশুদের এই বালিকা সমৃদ্ধি যোজনার অধীনে অনুদান প্রদান করা হয়ে থাকে।
২. এই যোজনার অধীনে ১৯৯৭ সালের ১৫ই আগস্ট এর পর যেসমস্ত কন্যা সন্তান জন্ম নিয়েছে তাদের অনুদান প্রদান করা হয়ে থাকে।
৩. বালিকা সমৃদ্ধি যোজনা অধীনে কেবলমাত্র দরিদ্র সীমার নিচে যে পরিবারগুলি রয়েছে সেই পরিবারগুলির কন্যা সন্তানদের নাম নথিভুক্ত করা যাবে।
বালিকা সমৃদ্ধি যোজনার অধীনে নিজের কন্যা সন্তানের নাম নথিভুক্ত করবেন কিভাবে?
অফলাইন এবং অনলাইন দুটি পদ্ধতিতেই বালিকা সমৃদ্ধি যোজনার অধীনে আপনারা নিজেদের কন্যাসন্তানের নাম নথিভুক্ত করতে পারবেন। তবে এক্ষেত্রে বিশেষ ভাবে খেয়াল রাখা প্রয়োজন যে শহরাঞ্চলে এবং গ্রামাঞ্চলে বসবাসকারী পরিবারগুলির কন্যা সন্তানের নাম এই যোজনায় নথিভুক্ত করার জন্য ভিন্ন ভিন্ন ফর্ম প্রদান করা হয়ে থাকে। অফলাইনে আবেদনের ক্ষেত্রে আপনারা যেকোনো অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র কিংবা স্বাস্থ্য পরিষেবা কেন্দ্র থেকে এই যোজনায় আবেদনের জন্য প্রয়োজনীয় ফর্ম পেয়ে যাবেন। এই ফর্মটি পূরণ করে প্রয়োজনের ডকুমেন্টস সহকারে আপনাকে জমা দিতে হবে। অন্যদিকে অনলাইনে আবেদনের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় ফর্মটি অনলাইনের মারফত পূরণ করে প্রয়োজনীয় নথি সহকারে সাবমিট করতে হবে।
আবেদনের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় নথি কোনগুলো?
১. কন্যা সন্তানের জন্মের শংসাপত্র।
২. পিতা মাতার ঠিকানার প্রমাণপত্র।
৩. অভিভাবকের আইডেন্টিটি প্রুফ (রেশন কার্ড/ ভোটার কার্ড/ ব্যাংকের অ্যাকাউন্টের পাসবই)।