টেট অনুত্তীর্ণ পরীক্ষার্থীরাও নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণের সুযোগ পাবেন, আদালতের নয়া নির্দেশ, জেনে নিন এখনই
এক বিতর্ক থামতে না থামতেই প্রাথমিক টেট নিয়ে আবারও আরেক বিতর্ক শুরু। ইতিপূর্বে প্রাথমিক টেট হবে কিনা তাই নিয়ে বারংবার বিতর্কের সম্মুখীন হতে হয়েছিলো প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদকে আর এবারে কারা টেট পরীক্ষা দিতে পারবেন তাই নিয়ে বারংবার বিতর্কে সম্মুখীন হতে হচ্ছে প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদকে। টেট পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্য ফর্ম পূরণের প্রক্রিয়া শুরু হবার পূর্বে পর্ষদের তরফে একটি বিজ্ঞপ্তি মারফত সমস্ত চাকরিপ্রার্থীদের জানানো হয়েছিলো যে, প্রাথমিক টেটে অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে চাকরিপ্রার্থীদের কোন কোন যোগ্যতা থাকা আবশ্যিক। তবে পরবর্তীতে যোগ্যতার মানে বদলে এনে ভিন্ন যোগ্যতাসম্পন্ন চাকরিপ্রার্থীদের টেট পরীক্ষায় অংশগ্রহণ নিয়ে সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে।
তবে এখানেই শেষ নয়, এবারে পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্য আবশ্যিক যোগ্যতায় নয় এবারে বদল আনা হলো নিয়োগ প্রক্রিয়ার ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় আবশ্যিক যোগ্যতার ক্ষেত্রে। বিগত ১৪ই অক্টোবর টেট পরীক্ষা এবং নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণের জন্য আবেদনের প্রক্রিয়া কার্যকরী করা হয়েছিল পর্ষদের তরফে। আর কিছুদিনের মধ্যেই তা শেষও হতে চলেছে। তবে আবেদনের এই শেষ মুহূর্তে কলকাতা হাইকোর্টের তরফে এমন এক নির্দেশ দেওয়া হলো যাতে রীতিমতো চোখ কপালে উঠেছে সমগ্র রাজ্যের চাকরিপ্রার্থীদের। কলকাতা হাইকোর্টের তরফে প্রকাশিত নির্দেশিকায় সমগ্র রাজ্যে চাকরিপ্রার্থীদের উদ্দেশ্যে জানানো হয়েছে যে, আগামী দিনগুলিতে প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে যে নিয়োগ পদ্ধতি অবলম্বন করা হবে তাতে অংশগ্রহণ করতে পারবেন টেট অনুত্তীর্ণ চাকরিপ্রার্থীরাও।
আদালতের এইরূপ সিদ্ধান্তে রীতিমতো অবাক রাজ্যের রাজনৈতিক মহল সহ শিক্ষাক্ষেত্রের গণ্যমান্য ব্যক্তিরাও। যদিও এই বিষয়টি নিয়ে নাগরিকদের মধ্যে বারংবার জল্পনা কল্পনা হলেও, এই সিদ্ধান্তে সীলমোহর দেওয়া হয়েছে আদালতের তরফেও। কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের তরফে নির্দেশ এই দেওয়া হয়েছে। আর বিচারপতির এই নির্দেশের জেরে, এবার থেকে ২০১৪ এবং ২০১৭ সালের টেট অনুত্তীর্ণ পরীক্ষার্থীরাও প্রাথমিকের শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করতে পারবেন। যার কারণে নতুন করে প্রায় লক্ষাধিক চাকরিপ্রার্থী টেটের নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করতে চলেছেন। ফলত প্রাথমিকে নিয়োগের ক্ষেত্রে আবারও প্রতিযোগিতা বাড়তে চলেছে রাজ্যের চাকরিপ্রার্থীদের জন্য।
যদিও আদালতের এই নির্দেশ নিয়ে চাকরিপ্রার্থীদের মধ্যে বিতর্কের শেষ নেই। রাজ্যের যুব মহলে বারবার প্রশ্ন উঠেছে হঠাৎ করে কেনো এরূপ সিদ্ধান্ত নিলো আদালত? কেনোই বা অনুর্তীর্ণ পরীক্ষার্থীরা শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণের সুযোগ পাবেন?
বিভিন্ন রিপোর্টে প্রকাশিত তথ্য অনুসারে জানা গিয়েছে যে, ইতিপূর্বে ২০১৪ সাল এবং ২০১৭ সালের টেটে অনুত্তীর্ণ কিছু পরীক্ষার্থী আদালতে মামলা করেছিলেন। তারা আদালতকে জানিয়েছিলেন যে, টেট পরীক্ষায় তারা ১৫০ নম্বরের মধ্যে থেকে ৮২ নম্বর পেয়েছিলেন। শতাংশে হিসেব করলে যা দাঁড়ায় ৫৪.৬৭ শতাংশ, অর্থাৎ নিয়ম অনুসারে যা দাঁড়ায় ৫৫ শতাংশে। এই সমস্ত পরীক্ষার্থীরা সংরক্ষিত শ্রেণীর অধীনে থাকায় ৫৫ শতাংশ নম্বর পেলেই তারা টেটের নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণের যোগ্য বলে বিবেচিত হবেন।
অ্যাক্সিস ব্যাঙ্কে সুদের পরিমাণ বেড়ে হলো দ্বিগুন, টাকা রাখলেই পাওয়া যাবে মোটা পরিমাণ লাভ
এর পাশাপাশি ২০১৪ সাল এবং ২০১৭ সালের টেট পরীক্ষার্থীরা আদালতকে আরও জানিয়েছিলেন যে, ২০১৪ সালের টেটের প্রশ্নপত্রে ৬ টি প্রশ্ন ভুল সংক্রান্ত মামলা এবং ২০১৭ সালের পেটে প্রশ্নপত্রে ৮ টি প্রশ্ন ভুল সংক্রান্ত মামলা এখনও পর্যন্ত আদালতে বিচারাধীন রয়েছে। আর মামলাকারীদের এইরূপ বক্তব্যের কারণে কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের তরফে ২০১৪ সালের ৫ জন পরীক্ষার্থী এবং ২০১৭ সালের ১৬ জন পরীক্ষার্থী অর্থাৎ মোট ২১ জন অনুত্তীর্ণ পরীক্ষার্থীকে টেটে অংশগ্রহণের সুযোগ করে দিয়েছিলেন অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় মহাশয়। তবে এবারে সেই সংখ্যাটি আর মোটেও একুশে সীমিত নেই। বর্তমানে প্রায়, লক্ষাধিক এইরূপ পরীক্ষার্থীকে টেট পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ করে দেওয়া হলো অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের তরফে।
আদালতের এইরূপ সিদ্ধান্তের কারণে মাথায় হাত পড়েছে বাকি চাকরিপ্রার্থীদের। ১১ হাজার শূন্য পদে শিক্ষক নিয়োগের কথা জানানো হয়েছিলো পর্ষদের তরফে। ইতিপূর্বে টেট পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্য প্রায় ৭ লক্ষ চাকরিপ্রার্থী আবেদন জানিয়েছিলেন। অন্যদিকে আদালতের এই সিদ্ধান্তের জেরে বহু সংখ্যক চাকরিপ্রার্থী প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগের প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণের সুযোগ পাবেন। যার কারণে স্বভাবতই প্রতিযোগিতা বাড়তে চলেছে চাকরিপ্রার্থীদের জন্য।