অল্প টাকায় শুরু করুন এই ৯ ব্যাবসা, মাস শেষে ইনকাম হবে মোটা টাকা
সমগ্র ভারতের যুবক-যুবতীরা বর্তমানে ব্যবসায়ে মনোযোগী হয়েছে। আর তাতেই ভারতজুড়ে বিভিন্ন ধরনের ব্যবসা বাড়তে শুরু করেছে। অন্যদিকে যুবক যুবতীদের ব্যবসা ক্ষেত্রে এগিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে রাজ্য সরকার হোক কিংবা কেন্দ্র সরকার অথবা বিভিন্ন সরকারি, বেসরকারি ব্যাংক নানাবিধ লোন, স্কিমের মাধ্যমে সহায়তা করা হয়ে থাকে। তবে ব্যবসা শুরু করার ক্ষেত্রে যে বিষয়টি জানা সর্বাধিক প্রয়োজন তা হলো আপনি কিসের ব্যবসা করবেন এবং সেক্ষেত্রে কতো বিনিয়োগ প্রয়োজন। আর তাই আজকের এই পোস্টে আমরা এমন কিছু ব্যবসার আইডিয়া নিয়ে উপস্থিত হয়েছি যেগুলি থেকে আপনারা প্রত্যেক মাসে যথেষ্ট টাকা উপার্জন করতে পারবেন। এমনকী ব্যবসার এই সমস্ত আইডিয়াগুলিকে কাজে লাগিয়ে আপনারা বাড়িতে বসেই নিজস্ব ব্যবসা শুরু করতে পারবেন।
আজকের এই পোস্টে আমরা যুবক যুবতীদের জন্য ৯ টি ব্যবসা সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য নিয়ে হাজির হয়েছি যেগুলো তারা স্বল্প বিনিয়োগে এমনকী কোনো বিনিয়োগ ছাড়াই নিজেদের বাড়িতে বসে শুরু করতে পারবেন।
১. ক্লাউড কিচেন:- আপনি যদি ভীষণ ভালো রান্না করতে পারেন তবে আপনার জন্য ক্লাউড কিচেন একেবারে পারফেক্ট। এক্ষেত্রে আপনার বাড়িতে যদি যথেষ্ট রান্নার জায়গা থাকে তাহলেই চলবে। ক্লাউড কিচেন বলতে এরকম ছোটো রেস্টুরেন্টগুলিকে বোঝায় যেগুলিতে শুধুমাত্র রান্না করা যায় কিন্তু অন্যান্য বড়ো রেস্টুরেন্টের মতো আলাদাভাবে বসার জায়গা থাকে না। গ্রাহকরা এই সমস্ত রেস্টুরেন্ট থেকে খাবার কিনে নিয়ে তাদের পছন্দসই স্থানে বসে প্রিয় মানুষদের সাথে খেতে পারেন।
এক্ষেত্রে আপনি নিজের রান্নাঘরেই ক্লাউড কিচেন তৈরি করতে পারবেন এবং যেকোনো ফুড ডেলিভারি সার্ভিসের সাথে যোগাযোগ করে হোম ডেলিভারি সার্ভিসও চালু করতে পারবেন। এমনকী শুধুমাত্র হোম ডেলিভারি নয় কর্পোরেট অফিস, ফ্যাক্টরির কর্মচারীদের টিফিন থেকে শুরু করে ছোট পার্টি, অনুষ্ঠানে খাবার ডেলিভার করার মাধ্যমেও আপনি আপনার ব্যবসাটিকে বাড়াতে পারবেন। এছাড়াও আপনার জন্য আরও একটি উপায় রয়েছে। আপনি যেকোনো একটি বড়ো রেস্টুরেন্টের সাথে যোগাযোগ করে তাদের বিভিন্ন ধরনের স্পেশাল রান্নাগুলি বানানো শিখে নিজের এলাকায় ওই রেস্টুরেন্টের একটি শাখা খুলতে পারেন। এক্ষেত্রেও আপনি যথেষ্ট কম খরচে নিজের রান্না করার আর্টের মাধ্যমে উপার্জন করতে পারবেন। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, একটি ছোটো ক্লাউড কিচেন এর মারফত আপনি প্রত্যেক বছরে ৮ থেকে ১০ লক্ষ টাকা উপার্জন করতে পারবেন।
২. ছোট নার্সারি:- আপনি যদি গাছ লাগাতে এবং সেগুলির মাধ্যমে যেকোনো জায়গায়কে সাজিয়ে তুলতে ভালোবাসেন তবে আপনিও আপনার বাড়িতে একটি ছোট নার্সারি গড়ে তুলতে পারেন। আপনার বাড়িতে যদি যথেষ্ট জায়গা থাকে যেখানে আপনি গাছ লাগাতে পারেন, তবে আপনি বাড়িতেই এই ব্যবসাটি শুরু করতে পারবেন। এক্ষেত্রে আপনি যেসমস্ত গাছগুলি মানুষজন তাদের বাড়িতে লাগাতে পছন্দ করেন কিংবা যে গাছগুলির মাধ্যমে তাদের বাড়িকে সাজিয়ে তুলতে ভালোবাসেন সেই সমস্ত গাছগুলি বিক্রি করার মাধ্যমে নিজের ব্যবসাটিকে জনপ্রিয় করে তুলতে পারেন। এছাড়াও বিভিন্ন ধরনের ভেষজ উদ্ভিদ এবং যে গাছগুলির খেয়াল রাখার ক্ষেত্রে মানুষকে কম খাটনি করতে হয় এমন ধরনের গাছ লাগানোর মাধ্যমেও নিজের ব্যবসাকে আকর্ষণীয় করে তুলতে পারেন। এমনকী আপনি বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়া সাইটের মারফত নিজের ব্যবসার প্রচারের মাধ্যমে বিভিন্ন অফিস পার্টি, অনুষ্ঠানে বিশিষ্ট স্থানগুলিকে সাজিয়ে তোলার জন্য গাছ ডেলিভার করার মাধ্যমে আপনার ব্যবসাটিকে বাড়াতে পারেন। একটি ছোটো নার্সারি থেকে প্রত্যেক মাসে ৫০০০ টাকা থেকে শুরু করে ১২০০০ টাকা পর্যন্ত উপার্জন করা যায়।
এবার রাজ্যের প্রত্যেক মহিলা পাবে লক্ষ্মীর ভান্ডার। রাজ্য সরকার জারি করলো নতুন নিয়ম
৩. অনলাইন ক্লাস:- আপনি যদি কোন একটি বিশেষ বিষয়ে পারদর্শী হয়ে থাকেন তবে zoom কিংবা গুগল মিটের মাধ্যমে নিজের অনলাইন ক্লাস শুরু করে বিনা বিনিয়োগে সেটিকে একটি ছোট ব্যবসায় পরিণত করতে পারেন। গান হোক কিংবা নাচ অথবা আঁকা কিংবা যোগব্যায়াম যেক্ষেত্রে আপনি পারদর্শী সেই বিষয়টি নিয়ে আপনি নিজের অনলাইন ক্লাস শুরু করতে পারেন। এক্ষেত্রে আপনি আপনার আশেপাশের ব্যক্তিদের মাধ্যমে নিজের অনলাইন ক্লাসের প্রচার করতে পারেন এবং ফ্রী ডেমো ক্লাসের মাধ্যমে সকলের মধ্যে নিজের প্রতিভা পৌঁছে দিতে পারেন। এরপর যখন স্টুডেন্টরা আপনার সাথে যোগাযোগ করবে তখন একটি নির্দিষ্ট বেতনের বিনিময় আপনি তাদের অনলাইন ক্লাসের মাধ্যমে নাচ, গান কিংবা আঁকা অথবা যোগব্যায়াম শেখাতে পারবেন।
৪. ই-কমার্স:- বিশ্বজুড়ে লকডাউনের পর এখন সবাই অনলাইনে বিভিন্ন জিনিসপত্র কিনতেই অভ্যস্ত। আর এই সুযোগটিকে কাজে লাগিয়ে আপনিও আপনার ব্যবসা শুরু করতে পারেন। এক্ষেত্রে আপনি যদি নিজে কোনো জিনিস বানিয়ে থাকেন আপনি সেটিকে ফ্লিপকার্ট, আমাজন এর মতো বিভিন্ন ই-কমার্স ওয়েবসাইটগুলোতে বিক্রি করতে পারবেন। এমনকী আপনি আপনার লোকাল মার্কেটে বিভিন্ন বিখ্যাত জিনিসগুলিকে হোলসেলারের মারফত কিনে সেগুলিকেও এই ওয়েবসাইটগুলির মারফত বিক্রি করতে পারবেন। আর এভাবেই আপনি যথেষ্ট কম বিনিয়োগে নিজস্ব ব্যবসা শুরু করতে পারবেন।
৫. ইভেন্ট প্ল্যানিং:- আজকাল পূজো হোক কিংবা জন্মদিন অথবা বিবাহ বার্ষিকী যেকোনো ক্ষেত্রেই সাধারণ মানুষ ছোটখাটো অনুষ্ঠান আয়োজন করেই থাকেন। তবে এই অনুষ্ঠান কিংবা পার্টি আয়োজনের ক্ষেত্রে সবথেকে মুশকিলের বিষয়টি হল অনুষ্ঠান অথবা পার্টির সমস্ত দায়িত্ব সামলানো। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সমস্ত দায়িত্ব সামলাতে সামলাতে বেশ কিছু মানুষ যে অনুষ্ঠান কিংবা পার্টি উপভোগ করতে পারেন না। আর এখানেই তাদের এই সমস্যা থেকে মুক্তি দিতে আপনি কাজ করবেন। আপনি যদি দায়িত্ব সহকারে যেকোন অনুষ্ঠান কিংবা পার্টির প্লানিং সহ অন্যান্য দায়িত্বগুলিকে সামলে নিয়ে যেকোন পার্টিকে সুসম্পন্ন করতে পারেন তবে আপনিও ইভেন্ট প্লানার হিসেবে নিজের কাজ শুরু করতে পারেন। আর এক্ষেত্রে আপনাকে এক টাকাও ইনভেস্ট করার প্রয়োজন হবে না। পরবর্তীতে আপনি আপনার অধীনে বেশ কিছু ব্যক্তিকে নিয়ে নিজের একটি কোম্পানি পর্যন্ত চালু করতে পারবেন এবং এই ব্যবসা থেকে যথেষ্ট উপার্জন করতে পারবেন।
৬. অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং:- অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং এর ক্ষেত্রে আপনাকে ফ্লিপকার্ট, অ্যামাজন এর মতো বিখ্যাত সাইটগুলির বিভিন্ন ধরনের জনপ্রিয় প্রোডাক্ট বিক্রি করার ক্ষেত্রে তাদের সহায়তা করতে হবে। পরোক্ষভাবে বলা যায় আপনি সাধারণ মানুষকে নিজের রিকমেন্ডশন অনুসারে ফ্লিপকার্ট, অ্যামাজন এর মতো ওয়েবসাইটগুলি থেকে জামাকাপড়, জুতো থেকে শুরু করে নানান ধরনের জিনিস কিনতে সহায়তা করবেন। আর আপনার রিকমেন্ডেশন অনুসারে যে সমস্ত জিনিসগুলো বিক্রি হবে সেই সমস্ত জিনিসের দাম অনুসারে আপনি একটি নির্দিষ্ট অংকের কমিশন পাবেন। আর এভাবে আপনি আপনার অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং এর ব্যবসা শুরু করতে পারবেন।
৭. স্পেশাল স্কিল:- আপনি যদি আর্টে ক্ষেত্রে পারদর্শী হন কিংবা মেহেন্দিতে অথবা মেক আপে, তবে আপনি আপনার সেই বিশেষ স্কিলটিকে নিজের পেশায় পরিবর্তন করতে পারেন। আপনি বিভিন্ন অনলাইন সাইটগুলিতে নিজের আঁকা ছবি, মেহেন্দি কিংবা মেকাপের বিভিন্ন ভিডিও, ছবি পোস্ট করার মাধ্যমে প্রচার করতে পারেন এবং সেখান থেকে আগ্রহী ব্যক্তিরা আপনাকে যোগাযোগ করবে। বিভিন্ন অনুষ্ঠান, পূজো, বিয়ের মরশুমে আপনি মেহেন্দি আর্টিস্ট কিংবা মেকাপ আর্টিস্ট হিসেবে নিজের ব্যবসায় যথেষ্ট ভালোভাবে কার্যকরী করতে পারবেন। এছাড়াও দেশ-বিদেশের শৌখিন মানুষেরা বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়া সাইটগুলি থেকে ছবি কিংবা DIY নিজেদের পছন্দ অনুসারে কিনতে পছন্দ করেন। আপনারা আপনাদের নিজস্ব আর্ট, DIY এর ছবি পোস্ট করার মাধ্যমে যেগুলি বিক্রি করার মাধ্যমে উপার্জন করতে পারবেন।
৮. সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম:- আপনি আপনার স্পেশাল স্কিলগুলি কাজে লাগিয়ে নানান ধরনের এন্টারটেইনিং ভিডিও তৈরি করে ইউটিউব, ইনস্টাগ্রাম, ফেসবুকের মতো সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলিতে পোস্ট করার মাধ্যমে যথেষ্ট টাকা উপার্জন করতে পারবেন। এক্ষেত্রে খানিকটা সময় লাগলেও আপনি অবশ্যই ফল পাবেন। এছাড়াও আপনি বিভিন্ন ছোট ছোট ব্র্যান্ডের সাথে কোলাবরেশনের মাধ্যমে তাদের প্রোডাক্ট বিক্রি করাতে পারলে সেখান থেকেও যথেষ্ট টাকা উপার্জন করতে পারবেন।
৯. ডে-কেয়ার:- বর্তমানে সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে মেয়েরাও ছেলেদের পাশাপাশি বিভিন্ন ক্ষেত্রে কাজ করছে। যেসমস্ত পরিবারগুলিতে বাবা-মা দুজনেই কাজ করেন তাদের সন্তানের খেয়াল রাখা যথেষ্ট সমস্যা হয়ে যায়। আর এখানেই দরকার পড়ে ডে-কেয়ার এর। এখন আপনিও নিজস্ব ডে-কেয়ার খুলে শিশুদের খেয়াল রাখার মাধ্যমে যথেষ্ট টাকা উপার্জন করতে পারেন। আপনার বাড়িতে যথেষ্ট জায়গা থাকলেই আপনি কাজটি শুরু করতে পারবেন। এরজন্য একটি বিশেষ সার্টিফিকেটের পাশাপাশি বাচ্চাদের জন্য কিছু খেলনার প্রয়োজন হবে। আপনি এই সার্টিফিকেটটি স্টেট গভর্মেন্ট এর কাছ থেকে পেয়ে যাবেন। সুতরাং আপনিও যদি বাচ্চাদের যথেষ্ট ভালোভাবে সামলাতে পারেন আপনিও একটি ডে-কেয়ার সেন্টার খোলার মাধ্যমে যথেষ্ট টাকা উপার্জন করতে পারবেন।