প্রত্যেক ছাত্রীকে কেন্দ্র সরকার দিচ্ছে বছরে ৩৬ হাজার টাকা স্কলারশিপ। পাওয়া যাবে ১৮ বছর পর্যন্ত
ভারতের বিভিন্ন মেট্রো শহরগুলিতে এবং উন্নত শহরাঞ্চলগুলিতে সমাজ এবং পরিবারের তরফে নারীশিক্ষা এবং নারীদের উন্নয়নের জন্য যথেষ্ট পদক্ষেপ নেওয়া হলেও দেশের বিভিন্ন প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে এখনও পর্যন্ত মেয়েদের বোঝা হিসেবে গণ্য করা হয়। আর কন্যাসন্তানের প্রতি পরিবারের এবং সমাজের এই দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনের জন্য ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে সুকন্যা সমৃদ্ধি যোজনা, বালিকা সমৃদ্ধি যোজনা থেকে শুরু করে বেটি বাঁচাও বেটি পড়াও এর মতো নানাপ্রকার প্রকল্প কার্যকরী করা হয়েছে, যেগুলির অধীনে ভারতে বসবাসকারী মেয়েদের সামাজিক এবং শিক্ষাগত অবস্থার উন্নতির জন্য অনুদান প্রদান করা হয়ে থাকে। তবে এখানেই শেষ নয়, এবারে কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে নারীদের জন্য কার্যকরী প্রকল্পের তালিকায় যুক্ত হল আরও একটি প্রকল্পের নাম।
কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে কার্যকরী এই প্রকল্পটি ন্যাশনাল স্কিম অফ ইনসেনটিভ টু গার্লস ফর সেকেন্ডারি এডুকেশন নামে সমগ্র দেশজুড়ে বিশেষ পরিচিত। কেন্দ্রীয় মানব কল্যাণ মন্ত্রকের তরফে কার্যকরী এই প্রকল্পটি সম্পর্কে কেন্দ্র সরকারের তরফে জানানো হয়েছে যে, ভারতে বসবাসকারী আর্থিকভাবে পিছিয়ে পড়া পরিবারগুলির কন্যাসন্তান যাতে শিক্ষাক্ষেত্রে এগিয়ে যেতে পারে তার জন্যই এই বিশেষ প্রকল্পটি কার্যকরী করা হয়েছে। এছাড়াও ছাত্রীদের অল্প বয়সে বিয়ের সংখ্যা কমানো এবং স্কুলছুট ছাত্রীদের সংখ্যা কমানোও এই প্রকল্পের আরও একটি উদ্দেশ্য।
আবশ্যিক যোগ্যতা কি কি:-
কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে কার্যকরী অন্যান্য প্রকল্পের মতোই এই প্রকল্পের অধীনে নাম নথিভুক্ত করার ক্ষেত্রে বেশ কতগুলি শর্ত আরোপ করা হয়েছে। এক্ষেত্রে সে শর্তগুলি হলো:-
১. কেবলমাত্র ছাত্রীরা এই প্রকল্পের সমস্ত রকম সুবিধা পাবেন।
২. অষ্টম শ্রেণী থেকে শুরু করে দশম শ্রেণীতে পাঠরত ছাত্রীরা এই প্রকল্পের অধীনে আবেদন করতে পারবেন। অষ্টম শ্রেণীতে উত্তীর্ণ হওয়ার পর যেসমস্ত ছাত্র-ছাত্রীরা নবম শ্রেণিতে ভর্তি হয়েছেন তারা এই প্রকল্পের অধীনে নাম নথিভুক্ত করতে পারবেন। তবে এক্ষেত্রে ছাত্রীদের অবশ্যই সরকারি কিংবা সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত স্কুলে পড়াশোনা করতে হবে।
৩. কেবলমাত্র তপশিলি জাতি কিংবা উপজাতিভুক্ত ছাত্রীরাই এই প্রকল্পের অধীনে নিজেদের নাম নথিভুক্ত করতে পারবেন।
৪. ১৪ থেকে ১৮ বছর বয়সী ছাত্রীরা শুধুমাত্র এই প্রকল্পের অধীনে নিজেদের নাম নথিভুক্ত করার সুযোগ পাবেন।
৫. বিবাহিত ছাত্রীরা কোনভাবেই এই প্রকল্পের অধীনে আবেদনের যোগ্য নন।
৬. যেসমস্ত ছাত্রীরা বেসরকারি স্কুলে পড়াশোনা করছেন অথবা কেন্দ্রীয় সরকারের অধীনস্থ স্কুলগুলিতে পড়াশোনা করছেন তারা কোনভাবেই এই প্রকল্পের অধীনে আবেদন করতে পারবেন না।
৭. কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারীদের কন্যাসন্তানও এই প্রকল্পের অধীনে আবেদনের যোগ্য নন।
এই প্রকল্পের অধীনে ছাত্রীরা কি কি সুবিধা পাবেন?
ন্যাশনাল স্কিম অব ইনসেনটিভ টু গার্লস ফর সেকেন্ডারি এডুকেশন প্রকল্পের অধীনে ছাত্রীরা পোস্ট অফিস অথবা ব্যাংকের অধীনে থাকা তাদের অ্যাকাউন্টে প্রত্যেক মাসে ৩ হাজার টাকা করে অনুদান পাবেন। তবে এই অনুদানের টাকা অবশ্যই ফিক্সড ডিপোজিট হিসেবে জমা করা হবে। এই প্রকল্পের সুবিধাভোগী ছাত্রীর যখন ১৮ বছর বয়স হবে তখন তিনি ওই ফিক্সড ডিপোজিটের সুদসহ সমস্ত অর্থটুকু তুলে নিতে পারবেন। ছাত্রীর ১৮ বছর বয়স হওয়ার আগে কোনোভাবেই এই ফিক্সড ডিপোজিটের টাকা উইথড্র করা যাবে না। এই প্রকল্পের অধীনে কত বছরের মেয়াদে একজন ছাত্রী টাকা জমা রাখছেন তার ওপর নির্ভর করে সুদ নির্ধারণ করা হয়ে থাকে। এমনকী এই প্রকল্পের অধীনে যেসমস্ত ছাত্রীর যে ফিক্সড ডিপোজিট রয়েছে তার স্বীকৃতি স্বরূপ ওই ছাত্রীকে পাসবই এবং সার্টিফিকেট পর্যন্ত দেওয়া হয়ে থাকে।
পোস্ট অফিসের টাইম ডিপোজিট স্কিমের নাম শুনেছেন? টাকা রাখলেই ফেরত পাবেন দ্বিগুন
আবেদনের প্রক্রিয়া:-
১. এই প্রকল্পের অধীনে আবেদনের ক্ষেত্রে ছাত্রীদের প্রথমেই ন্যাশনাল স্কলারশিপ পোর্টালের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট https://scholarships.gov.in/ -এ যেতে হবে।
২. এরপর হোম পেইজে থাকা New Registration নামক অপশনটিতে ক্লিক করতে হবে। এরপর রেজিস্ট্রেশন এর ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় গাইডলাইনগুলি আপনার সামনে আসবে। এক্ষেত্রে আপনাকে Continue নামক অপশনে ক্লিক করতে হবে।
৩. উপরোক্ত অপশনে ক্লিক করলে আপনার সামনে রেজিস্ট্রেশনের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় ফর্মটি চলে আসবে। ওই ফর্মে সমস্ত তথ্যগুলি সঠিকভাবে পূরণ করে Register অপশনে ক্লিক করতে হবে।
৪. Register অপশনটিতে ক্লিক করলে আপনার সামনে আপনার অ্যাপ্লিকেশন আইডি এবং পাসওয়ার্ডটি চলে আসবে। এর পাশাপাশি আপনাকে আপনার রেজিস্টার্ড মোবাইল নম্বরে অ্যাপ্লিকেশন আইডি এবং পাসওয়ার্ড সহকারে একটি এসএমএস পাঠানো হবে।
৫. এরপর পুনরায় আপনাকে https://scholarships.gov.in/fresh/newstdRegfrmInstruction ওয়েবসাইটে যেতে হবে এবং Login to Apply অপশনে ক্লিক করতে হবে।
৬. এরপর অ্যাপ্লিকেশন আইডি এবং পাসওয়ার্ডটি সঠিকভাবে লিখে ক্যাপচা কোডটি পূরণ করতে হবে এবং Login অপশনে ক্লিক করতে হবে।
৭. উপরোক্ত অপশনে ক্লিক করলে আপনার রেজিস্টার্ড মোবাইল নাম্বারে একটি OTP আসবে। ওই OTP টি আপনাকে সঠিকভাবে সঠিক স্থানে লিখতে হবে।
৮. এরপর আপনাকে আপনার নিজের পছন্দ অনুসারে একটি নতুন পাসওয়ার্ড ক্লিক করতে হবে এবং সেটি কনফার্ম করতে হবে। সবশেষে submit অপশনে ক্লিক করলেই আপনি Applicant’s Dashboard এর পেজটি দেখতে পাবেন।
৯. এরপর উপরোক্ত পেজে থাকা Application Form এ ক্লিক করে সমস্ত প্রয়োজনের তথ্যগুলি সঠিকভাবে পূরণ করতে হবে। এরপর প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টসগুলি সঠিকভাবে আপলোড করে Final Submit অপশনে ক্লিক করলে এই প্রকল্পের অধীনে আপনার নাম নথিভুক্তকরণের প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে।
কি কি ডকুমেন্টস প্রয়োজন হবে?
১. আবেদনকারীর আধার কার্ড।
২. Domicile Certificate
৩. আবদানকারীর পিতা, মাতা অথবা অভিভাবকের ইনকাম সার্টিফিকেট।
৪. বর্তমান ক্লাসে ভর্তির রশিদ।
৫. বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক অথবা প্রিন্সিপালের তরফে ইস্যু করা নবম শ্রেণীতে ভর্তি হওয়ার পর উক্ত ছাত্রী ২ বছর ধারাবাহিকভাবে পড়াশোনা করেছে এ বিষয়ক সার্টিফিকেট।
৬. ছাত্রীর দশম শ্রেণীর মার্কশিট।
৭. ছাত্রীর ব্যাংকের পাসবই।
৮. প্রতিবন্ধী সার্টিফিকেট।