ডিসেম্বরে এই ৬ প্রকল্পের টাকা পেতে চলেছেন কৃষকরা। দেখে নিন কোন কোন প্রকল্প
পশ্চিমবঙ্গের কৃষকদের যাতে কৃষিকাজ করার ক্ষেত্রে কোনোরকম সমস্যার সম্মুখীন না হতে হয় এবং কৃষিক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় সার, কীটনাশক, যন্ত্রপাতি কেনার জন্য যাতে কোনো প্রকার ঋণ না নিতে হয় তার জন্য পশ্চিমবঙ্গ সরকার ও কেন্দ্রীয় সরকারের তরফের নানাপ্রকার প্রকল্প কার্যকর করা হয়েছে। এই প্রকল্পগুলির আওতায় পশ্চিমবঙ্গের কৃষকরা কোনো ক্ষেত্রে প্রত্যেক মাসে, কোনো ক্ষেত্রে ত্রৈমাসিক ভিত্তিতে, আবার কোনক্ষেত্রে বার্ষিক ভিত্তিতে টাকা পেয়ে থাকে। তবে এই সকল প্রকল্পগুলিতে বিভিন্ন সময় টাকা দেওয়ার কারণে অধিকাংশ কৃষকই কবে কোন প্রকল্পের অধীনে টাকা পাবেন তা সঠিকভাবে জানেন না। আর তাই এসংক্রান্ত বিভিন্ন ধরনের খবরের জন্য পশ্চিমবঙ্গের কৃষকরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে থাকেন। আর তাই আজ আমরা সমস্ত কৃষকদের সুবিধার্থে আজকের এই পোস্টে এমন ৬ টি প্রকল্পের খবর নিয়ে হাজির হয়েছি যেগুলির অধীনে পশ্চিমবঙ্গের কৃষকরা এই ডিসেম্বর মাসে অনুদান পেয়ে যাবেন।
ডিসেম্বর মাসে কৃষকরা যেসমস্ত প্রকল্পের অধীনে টাকা পেতে চলেছেন তার তালিকার একেবারে প্রথমেই রয়েছে কিষাণ ক্রেডিট কার্ড। সরকারের তরফে কার্যকরী কিষাণ ক্রেডিট কার্ডের অধীনে কৃষকরা ১.৬ লক্ষ টাকা পর্যন্ত ঋণ পেয়ে যেতে পারেন কোনোরকম গ্যারান্টি ছাড়াই। এছাড়াও কিষাণ ক্রেডিট কার্ডের অধীনে কৃষকদের ৩ লক্ষ টাকা পর্যন্ত পেয়ে থাকেন। এমনকী টাকা দেওয়ার পর সময় মতো ফেরত দিলে সুদের ক্ষেত্রেও প্রচুর ছাড় দেওয়া হয়ে থাকে ব্যাংকের তরফে। তবে কোন কৃষক কতো টাকা পাবেন তার নির্ভর করছে ওই কৃষকের জমির পরিমাণের ওপর। ইতিপূর্বে যেসমস্ত কৃষকরা কিষাণ ক্রেডিট কার্ডের অধীনে অনুদানের জন্য আবেদন করেছিলেন মনে করা হচ্ছে তারা এই চলতি মাসে অর্থাৎ ডিসেম্বর মাসে কিষাণ ক্রেডিট কার্ডের আওতায় অনুদানের টাকা পেয়ে যাবেন। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, এটি পূর্বে নভেম্বর মাসে রাজ্যজুড়ে যে দুয়ারে সরকারের আয়োজন করা হয়েছিল তার মাধ্যমে কিষাণ ক্রেডিট কার্ডের জন্য কৃষকরা আবেদন জানিয়েছিলেন। এমনকী এখনো কৃষকরা ব্যাংকের মাধ্যমে আপনারা কিষাণ ক্রেডিট কার্ডের অধীনে নিজেদের নাম নথিভুক্ত করার জন্য আবেদন করতে পারবেন।
কৃষকরা যাতে তাদের ধান বিক্রি করে যথেষ্ট পরিমাণ লাভ করতে পারেন এবং ধান বিক্রির ক্ষেত্রে যাতে তাদের কেউ ঠকাতে না পারে তার জন্য সরকারের প্যাডি পারচেজ নামক একটি প্রকল্প কার্যকরী করা হয়েছে। এই প্রকল্পের অধীনে কৃষকরা তাদের সুবিধা অনুসারে প্যাডি প্রোকিউরমেন্ট সেন্টারে ধান বিক্রি করতে পারবেন। ইতিপূর্বে যেসমস্ত কৃষকরা সরকারের কাছে ধান বিক্রি করেছিলেন অথবা যারা এই মাসে ধান বিক্রি করতে চলেছেন তারা এই ডিসেম্বর মাসের মধ্যেই এই প্রকল্পের অধীনে তাদের ফসলের দাম পেয়ে যাবেন। তবে এক্ষেত্রে আপনি কতো টাকা পাবেন তা সম্পূর্ণভাবে নির্ভর করছে আপনার জমিতে উৎপন্ন ধানের পরিমাণের ওপর। এখন আপনারা আমার রেশন খাদ্যসাথী অ্যাপের মাধ্যমে বাড়িতে বসেই দেখে নিতে পারবেন আপনার এলাকায় কোথায় কোথায় প্যাডি প্রোকিউরমেন্ট সেন্টার রয়েছে এবং নিজেদের সুবিধামত দিনের নির্দিষ্ট সময়ে ওই সেন্টারে গিয়ে ধান বিক্রি করতে পারবেন।
বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে ফসল নষ্ট হয়ে গেলে পশ্চিমবাংলার কৃষকদের যাতে অত্যাধিক ক্ষতি সম্মুখীন না হতে হয় তার জন্য মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্যোগে রাজ্য সরকারের তরফে বাংলা শস্য বীমা প্রকল্পটি কার্যকরী করা হয়েছিলো। এই প্রকল্পের অধীনে খারিফ মরশুমে এবং রবি মরশুমে কৃষকরা তাদের ফসলের বীমা করাতে পারেন এবং যেকোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগে ওই ফসলের কোনোরকম ক্ষতি হলে কৃষকদের জমি এবং ফসলের পরিমাণ অনুসারে ক্ষতিপূরণ পেয়ে থাকেন। বর্তমানে এই প্রকল্পের অধীনে ২০২১ সালের রবি সিজন এবং ২০২২ সালের খারিফ সিজনের অনুদান দেওয়ার প্রক্রিয়া কার্যকরী করা হয়েছে। মনে করা হচ্ছে, যেসকল কৃষকরা এই দুই সিজনে বাংলা শস্য বিমার অধীনে ক্ষতিপূরণের জন্য আবেদন জানিয়েছিলেন তারা এই ডিসেম্বর মাসেই তাদের ক্ষতিপূরণের টাকা পেয়ে যাবেন। এমনকী বর্তমানে বাংলা শস্য বিমার অধীনে ২০২২ সালের রবি সিজনের জন্য আবেদনের প্রক্রিয়াও চলছে।
কৃষকদের কৃষিক্ষেত্রে যাতে কোনোরকম সমস্যার সম্মুখীন না হতে হয় এবং প্রয়োজনে উন্নতমানের যন্ত্রপাতির অভাবে যাতে কৃষিকাজ কোনভাবে বন্ধ না হয়ে যায় তার জন্য কৃষি যন্ত্রায়ন প্রকল্পটি কার্যকরী করা হয়েছে। এই প্রকল্পের অধীনে কৃষকদের কৃষিক্ষেত্রে চাষের প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি কেনার জন্য অর্ধেক মূল্য প্রদান করা হয়ে থাকে এবং বাকি অর্ধেক মূল্য কৃষককে প্রদান করতে হয়। যদিও প্রথমে কৃষককে ওই সমস্ত যন্ত্রপাতির সম্পূর্ণ মূল্য দিয়ে যন্ত্রপাতিগুলি সংগ্রহ করতে হয় এবং পরবর্তীতে বাকি অর্ধেক টাকা সরকারের তরফে সরাসরি কৃষকদের অ্যাকাউন্টে ট্রান্সফার করে দেওয়া হয়ে থাকে। ইতিপূর্বে যারা এই প্রকল্পের অধীনে যন্ত্রপাতি কেনার ক্ষেত্রে ভর্তুকির জন্য আবেদন করেছিলেন তারা এই ডিসেম্বর মাসেই এই প্রকল্পের অধীনে ভর্তুকি পেয়ে যাবেন।
কৃষিকাজের ক্ষেত্রে অন্যতম প্রয়োজনীয় একটি বিষয় হলো সেচকার্য। আর পশ্চিমবঙ্গের কৃষকরা যাতে সঠিক যন্ত্রটির মাধ্যমে কৃষিক্ষেত্রে সেচের ব্যবস্থা করতে পারে তার জন্যই বাংলা কৃষিসেচ যোজনা চালু করা হয়েছে। এই যোজনার অধীনে কৃষকদের সেচের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় যন্ত্রাংশ কেনার জন্য রাজ্য সরকারের তরফে অনুদান প্রদান করা হয়ে থাকে, তবে এই প্রকল্পের অধীনে যন্ত্রাংশ কেনার জন্য কেবলমাত্র ক্ষুদ্র এবং প্রান্তিক চাষীরাই আবেদন করতে পারবেন। এই প্রকল্পের অধীনে সর্বনিম্ন ১৫১৯৩ টাকা থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ৬৫৮২৭ টাকা পেয়ে যাবেন। তবে কোন কৃষক কতো টাকা পাবেন তা তাদের কৃষি জমি এবং যন্ত্রাংশের মানের উপর নির্ভর করছে।
পশ্চিমবঙ্গের কৃষকদের কৃষিক্ষেত্রে আর্থিকভাবে সহায়তা করার জন্য মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তরফে কৃষক বন্ধু প্রকল্প কার্যকরী করা হয়েছে। এই প্রকল্পের অধীনে কৃষকরা বছরের দু’বার তাদের কৃষি জমির পরিমাণের উপর ভিত্তি করে ২ হাজার টাকা থেকে শুরু করে ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত পেয়ে থাকেন। অর্থাৎ এক বছরে একজন কৃষক সর্বনিম্ন ৪ হাজার টাকা থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত অনুদান পেয়ে যেতে পারেন। এমনকী এই প্রকল্পের আওতায় থাকা সুবিধাভোগী কৃষকদের মৃত্যু হলেও তাদের পরিবার বা আইনসম্মত উত্তরাধিকারী এই প্রকল্পের সুবিধা পাবেন। কৃষকবন্ধু প্রকল্পের অধীনে কার্যকরী এই সুবিধাটি কৃষক বন্ধু ডেথ বেনিফিট নামে পরিচিত। এই প্রকল্পের অধীনে নাম নথিভুক্ত রয়েছে এরূপ ১৮ বছর থেকে শুরু করে ৬০ বছর বয়সী কোনো কৃষকের মৃত্যু হলে তার পরিবার বা আইন সম্মত উত্তরাধিকারী সর্বোচ্চ ২ লক্ষ টাকা পেয়ে থাকেন। তবে এক্ষেত্রে কৃষকবন্ধু প্রকল্পের অধীনে নাম নথিভুক্ত রয়েছে এইরূপ কৃষকের মৃত্যুর তিন মাসের মধ্যে তার ডেথ সার্টিফিকেট সহকারে কৃষকবন্ধু ডেথ বেনিফিট-এর জন্য আবেদন করতে হবে। ইতিপূর্বে যেসমস্ত কৃষকদের পরিবারের লোকজন কৃষকবন্ধু ডেথ বেনিফিটের অধীনে অনুদানের জন্য আবেদন করেছিলেন তারা এই ডিসেম্বর মাসেই ওই প্রকল্পের অধীনে অনুদানের টাকা পেতে চলেছেন।