পোস্ট অফিসের এই স্কিমে প্রতিদিন মাত্র ৯৫ টাকা বিনিয়োগ করে ফেরত পেয়ে যান ১৪ লক্ষ টাকা পর্যন্ত
সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে সমগ্র ভারতের মানুষ যে মুদ্রাস্ফীতির সম্মুখীন হয়েছেন তাতে সবদিক সামলে উঠতে রীতিমতো হিমশিম খেতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে। আর তাই সাধারণ মানুষকে বিশেষত গ্রামের মানুষদের নানা ধরনের সুবিধা প্রদান করার স্বার্থে ভারতীয় ডাক বিভাগের তরফে এক বিশেষ স্কিম চালু করা হয়েছে, যে স্কিমে বিনিয়োগের মাধ্যমে ভারতীয় নাগরিকরা প্রচুর পরিমাণ টাকা উপার্জন করে নিতে পারবেন। আর এই স্কিমে বিনিয়োগের মাধ্যমে নাগরিকরা নিজেদের ভবিষ্যতের পাশাপাশি নিজেদের পরিবারের ভবিষ্যতেও সুরক্ষিত করতে পারবেন। আর আজ আমরা সকল ভারতীয় নাগরিকদের সাথে এমন একটি যোজনা নিয়ে আলোচনা করতে চলেছি যাতে বিনিয়োগের মাধ্যমে নাগরিকরা তাদের টাকা ফেরত পাওয়ার পাশাপাশি বীমা কভারেজও পেয়ে যাবেন।
আর ভারতীয় ডাক বিভাগের তরফে কার্যকরী এই স্কিমটি সমগ্র ভারতে গ্রাম সুমঙ্গল গ্রামীণ ডাক জীবন বীমা নামেই পরিচিত। ১৯৬৫ সালে ভারতীয় ডাক বিভাগের তরফে গ্রামাঞ্চলের মানুষদের বিশেষত দুর্বল গোষ্ঠীর মহিলা সহ অন্যান্য নাগরিকদের বীমা প্রদানের জন্য এই প্রকল্প কার্যকরী করা হয়েছিলো। এই স্কিমের অধীনে পোস্টাল লাইফ ইন্স্যুরেন্স এবং রুরাল পোস্টাল লাইফ ইন্স্যুরেন্স-এর মতো দুটি বীমা কভারেজ রয়েছে। আপনি যদি ভারতের যেকোনো রাজ্যের গ্রামাঞ্চলে বসবাস করেন তবে আপনিও এই প্রকল্পের অধীনে নিজের নাম নথিভুক্ত করতে পারবেন। তবে এই প্রকল্পের অধীনে নাম পূর্বে যেকোনো নাগরিকের অবশ্যই এই প্রকল্পে কতো দিনের মেয়াদে বিনিয়োগ করতে হবে, কতো টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগ করা সম্ভব, কি কি সুবিধা পাওয়া যাবে এই সমস্ত বিষয়গুলি সম্পর্কে জানা আবশ্যক।
এই গ্রাম সুমঙ্গল স্কিমের অধীনে আবেদনের ক্ষেত্রে বিনিয়োগকারীকে অবশ্যই একজন ভারতীয় নাগরিক হতে হবে এমনকী এই যোজনার অধীনে আবেদনের ক্ষেত্রে বিনিয়োগকারীর নির্দিষ্ট বয়সসীমাও রয়েছে। এই যোজনার অধীনে আবেদনের ক্ষেত্রে আবেদনকারীর বয়স ১৯ বছর থেকে শুরু করে ৪৫ বছরের মধ্যে হওয়া আবশ্যক। এই স্কিমের অধীনে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বিনিয়োগকারীকে দীর্ঘসময়ের জন্য বিনিয়োগ করতে হবে। একজন বিনিয়োগকারী এই যোজনার অধীনে ১৫ বছর থেকে শুরু করে ২০ বছরের সময়কালের জন্য বিনিয়োগ করতে পারবেন। তবে ২০ বছরের সময়কালের জন্য বিনিয়োগের ক্ষেত্রে একজন বিনিয়োগকারীর বয়স অবশ্যই ৪০ বছরের চেয়ে কম হতে হবে। অন্যদিকে যেসমস্ত বিনিয়োগকারীর বয়স ৪০ এর বেশি এবং ৪৫ এর কম তারা ১৫ বছরের জন্য এই পলিসির অধীনে বিনিয়োগ করতে পারবেন।
গ্রাহক অভিযোগ করলেই চাকরি যাবে সরকারি কর্মচারীর। নতুন শ্রম আইন সমন্ধে বিস্তারিত জেনে নিন
এই পলিসির অধীনে পলিসি ম্যাচিওর হওয়ার আগেই ৩ বার টাকা রিটার্ন পাওয়া যাবে এবং পলিসি ম্যাচিওর হওয়ার পর সম্পূর্ণ টাকা সুদসহ ফেরত পাওয়া যাবে। এই স্কিমের আওতায় ১৫ বছরের সময়কালের জন্য বিনিয়োগের ক্ষেত্রে ৬ বছর, ৯ বছর এবং ১২ বছর পূর্ণ হলে প্রতিটি ২০ শতাংশ বোনাস এবং মেয়াদ পূর্তির ওপর ৪০ শতাংশ বোনাস পেয়ে যাবেন বিনিয়োগকারীরা। অন্যদিকে, যেসকল বিনিয়োগকারী এই পলিসির অধীনে ২০ বছরের জন্য বিনিয়োগ করবেন তারা ৮ বছর, ১২ বছর এবং ১৬ বছরের মেয়াদ পূরণ হলে প্রতিক্ষেত্রে ২০ শতাংশ এবং মেয়াদ পূর্তির ওপর ৪০ শতাংশ বোনাস পাবেন। তবে কোনো ক্ষেত্রে যদি পলিসি ম্যাচিওর হওয়ার আগে বিনিয়োগকারীর মৃত্যু হয় তবে ওই বিনিয়োগকারীর আইনসম্মত উত্তরাধিকার বা নমিনী সুদসহ টাকা ফেরত পাবেন এবং বোনাসের অর্থও পেয়ে যাবেন। একজন ব্যক্তি যদি তার ২৫ বছর বয়সে এই যোজনার অধীনে ২০ বছরের জন্য ৭ লক্ষ টাকা বিনিয়োগ করেন তবে উক্ত ব্যক্তিকে প্রত্যেক মাসে ২৮৫৩ টাকা বিনিয়োগ করতে হবে। সুতরাং, হিসেব অনুসারে একজন ব্যক্তিকে প্রত্যেকদিন শুধুমাত্র ৯৫ টাকা করে বিনিয়োগ করতে হবে।
এক্ষেত্রে একজন নাগরিক ত্রৈমাসিক, অর্ধ-বার্ষিক কিংবা বার্ষিক ভিত্তিতেও এই স্কিমের প্রিমিয়ামের টাকা দিতে পারবেন। এই স্কিমের অধীনে ত্রৈমাসিক ভিত্তিতে ৮৪৪৯ টাকা, অর্ধ-বর্ষের ভিত্তিতে ১৬,৭১৫ টাকা এবং বার্ষিক ভিত্তিতে ৩২, ৭৩৫ দিতে হয়। এবারে এই পলিসির নিয়ম অনুসারে ৮ বছর, ১২ বছর এবং ১৬ বছরের সময়সীমা উত্তীর্ণ হওয়ায় ২০ শতাংশ হারে ১.৪ লক্ষ টাকা দেওয়া হবে বিনিয়োগকারীকে। অন্যদিকে, পলিসি মেয়াদ উত্তীর্ণ হলে অর্থাৎ ২০ তম বছরে বিনিয়োগকারী ৪.৮ লক্ষ টাকা পাবেন। অন্যদিকে, বিনিয়োগকৃত মূল আমানতের প্রতি হাজার টাকার ওপরে ৪৮ টাকার হিসেবে ৩৩,৬০০ টাকার বোনাস দেওয়া হয়ে থাকে একজন বিনিয়োগকারীকে। অর্থাৎ পলিসির মেয়াদ উত্তীর্ণ হলে এই বোনাস হিসেবে শুধুমাত্র ৬.৭২ লক্ষ টাকা পাবেন একজন বিনিয়োগকারী। সুতরাং, মূল আমানত এবং বোনাসের অর্থ মিলিয়ে ২০ বছর পর একজন বিনিয়োগকারী ১৩.৭২ লক্ষ টাকা ফেরত পাবেন। এরমধ্যে বিনিয়োগকারী ৪.২ লক্ষ টাকা ৮ বছর, ১২ বছর এবং ১৬ বছরের মেয়াদ উত্তীর্ণ হলে নির্দিষ্ট বোনাসের হারে পেয়ে যাবেন এবং ২০ বছরের মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার পর ৯.৫২ লক্ষ টাকা ফেরত পাবেন বিনিয়োগকারী।