প্রকল্প

কন্যা সন্তানের ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত করতে চান? সরকার দিচ্ছে এই ১০ টি প্রকল্পের সুবিধা

সমগ্র ভারতের বিভিন্ন রাজ্যের নানাবিধ প্রত্যন্ত অঞ্চলে বসবাসকারী মেয়েরাও যাতে তাদের শিক্ষা থেকে শুরু করে ভবিষ্যৎ গঠনের ক্ষেত্রে মনোযোগী হতে পারে তাই কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে বিভিন্ন ধরনের প্রকল্প কার্যকরী করা হয়েছে। তেমনভাবেই কন্যা সন্তানের পিতা-মাতা যাতে কন্যা সন্তানের জন্মের পর থেকেই তার ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত করার জন্য বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিনিয়োগ করতে পারে তার জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে নানা ধরনের স্কিম কার্যকরী করা হয়েছে।

মেয়েদের ভবিষ্যত সুরক্ষিত করার ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে সুকন্যা সমৃদ্ধি যোজনা, মিউচুয়াল ফান্ড, পিপিএফ থেকে শুরু করে আরও নানাধরনের স্কিম কার্যকরী করা হয়েছে যেগুলিতে বিনিয়োগের মাধ্যমে কন্যা সন্তানের পিতা-মাতা তাদের কন্যা সন্তানের ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত করতে পারবেন। তবে অনেকক্ষেত্রেই কন্যা সন্তানের পিতা-মাতা কোন স্কিমে কোন সময় বিনিয়োগ করা প্রয়োজন এবং এই বিনিয়োগ সংক্রান্ত নানা ধরনের তথ্য না জানার কারণে সঠিক সময় সঠিক স্কিমে বিনিয়োগ করতে পারেন না যার ফলে তাদের লোকসানের সম্মুখীন হতে হয়। এই পোস্টে এমন কতগুলি স্কিম সম্পর্কে আলোচনা করতে চলেছি যেগুলোতে বিনিয়োগের মাধ্যমে দেশের যেকোনো প্রান্তে বসবাসকারী কন্যাসন্তানের পিতা, মাতা কিংবা অভিভাবক তাদের কন্যা সন্তানের ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত করতে পারবেন।

সরকারের তরফে মেয়েদের জন্য কার্যকরী এই স্কিমগুলির তালিকায় প্রথম নাম রয়েছে সুকন্যা সমৃদ্ধি যোজনার। কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে দেশের মেয়েদের জন্য কার্যকরী প্রকল্পগুলির মধ্যে অন্যতম উল্লেখযোগ্য একটি প্রকল্প হলো সুকন্যা সমৃদ্ধি যোজনা। এই যোজনার অধীনে একজন পিতা অথবা মাতা তার দুটি কন্যা সন্তানের ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত করার জন্য বিনিয়োগ করতে পারেন। যেকোনো ব্যাংকে কিংবা পোস্ট অফিসে এই যোজনার অধীনে অ্যাকাউন্ট ওপেন করা যেতে পারে এবং যেকোনো ক্ষেত্রেই এই ধরনের অ্যাকাউন্টে কেন্দ্রীয় সরকারের তরফের ৭.৬ শতাংশ হারে সুদ দেওয়া হয়ে থাকে। এই যোজনায় বিনিয়োগের ক্ষেত্রে একজন পিতা অথবা মাতাকে সর্বনিম্ন ১০০০ টাকা এবং সর্বোচ্চ ১.৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগ করতে হবে। কন্যা সন্তানের ২১ বছর বয়স হলে এই অ্যাকাউন্টে জমাকৃত রাশি সুদসহ ওই কন্যা সন্তান নিজের ভবিষ্যৎ গঠনের কাজে কিংবা বিয়ের ক্ষেত্রে কাজে লাগাতে পারে।

বন্ধন ব্যাংকে উচ্চমাধ্যমিক পাশে বহু সংখ্যক শূন্যপদে কর্মী নিয়োগ, আবেদন করুন এইভাবে

কন্যা সন্তানদের পিতা-মাতার বিনিয়োগের জন্য বিশেষভাবে চিলড্রেন গিফট মিউচুয়াল ফান্ড কার্যকরী করা হয়েছে। এই মিউচুয়াল ফান্ডে কন্যা সন্তানের পিতা-মাতা যে অর্থ বিনিয়োগ করেন ওই অর্থ ঋণ এবং ইক্যুইটি ফান্ডে বিনিয়োগ করা হয়ে থাকে। এমনকী এই যোজনায় ১৮ বছরের লক-ইন পিরিয়ড রয়েছে যার মাধ্যমে দীর্ঘদিন বিনিয়োগের মারফত প্রচুর টাকা রিটার্ন পাওয়া যেতে পারে।

অন্যদিকে, যেকোনো পিতা অথবা মাথা তার কন্যা সন্তানের ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত করার জন্য পোস্ট অফিসের ন্যাশনাল সেভিংস সার্টিফিকেট নামক এক বিশেষ স্কিমে বিনিয়োগ করতে পারেন। এই স্কিমে কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে ৭.৬ শতাংশ হারে সুদ দেওয়া হয়ে থাকে। এক্ষেত্রে সর্বনিম্ন ১ হাজার টাকা বিনিয়োগ করা যেতে পারে এবং সর্বোচ্চ বিনিয়োগের কোনো সীমা নেই। ন্যাশনাল সেভিংস সার্টিফিকেট স্কিমে সর্বোচ্চ ৫ বছরের জন্য বিনিয়োগ করা যেতে পারে তবে আপনি চাইলে ৫ বছর পর যে অর্থ হাতে পাবেন সেই অর্ধ পুনরায় ৫ বছরের জন্য এই স্কিমে বিনিয়োগ করতে পারবেন। এমনকী এই স্কিমের সব থেকে আকর্ষণীয় বিষয়টি হলো এক্ষেত্রে আয়করের ছাড় পাওয়া যায়।

কন্যা সন্তানের জন্য বিনিয়োগের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য স্কিমগুলির তালিকায় আরও একটি অন্যতম জনপ্রিয় স্কিমের নাম হল পোস্ট অফিস টার্ম ডিপোজিট স্কিম। এই স্কিমেও আপনি সর্বনিম্ন ১ হাজার টাকা থেকে বিনিয়োগ শুরু করতে পারেন এবং এক্ষেত্রে সর্বোচ্চ বিনিয়োগের কোনো ঊর্ধ্বসীমা পোস্ট অফিসের তরফে নির্ধারণ করা হয়নি। এই স্কিমেও ৫ বছরের লক-ইন পিরিয়ড-এর পাশাপাশি নানা ধরনের সুবিধা রয়েছে। এমনকি এই স্কিমের অধীনে অ্যাকাউন্ট ওপেন করলে তা দেশের যেকোনো জায়গায় ট্রান্সফার করা যেতে পারে।

কন্যা সন্তানের জন্য বিনিয়োগের ক্ষেত্রে এমন একটি স্কিমও রয়েছে যাতে বিনিয়োগের মাধ্যমে আপনি জীবন বীমার পাশাপাশি বিনিয়োগকৃত অর্থ নিশ্চিতরূপে রিটার্ন পাবেন। আজ্ঞে হ্যাঁ, ইউনিট লিঙ্কড ইন্স্যুরেন্স প্ল্যান হলো এমন একটি প্ল্যান যেখানে আপনি জীবন বীমা এবং বিনিয়োগ এরপর সুদসহ সম্পূর্ণ অর্থ রিটার্নের সুবিধা পেয়ে যাবেন। এমনকী যেসকল ক্ষেত্রে মা-বাবা অনুপস্থিত সেক্ষেত্রে সন্তানের শিক্ষার সমস্ত খরচ নিয়ে থাকে এই বীমা কোম্পানি। অন্যদিকে, বাবা-মায়ের মৃত্যু ঘটলে বীমা কোম্পানির তরফে প্রিমিয়াম প্রদান করা হয়ে থাকে, অনেক ক্ষেত্রে কন্যা সন্তানের আর্থিক অবস্থার উপর ভিত্তি করে এককালীন টাকা ও প্রদান করা হয়ে থাকে।

আপনি যদি কন্যা সন্তানের ভবিষ্যতের জন্য কোনো স্কিমে বিনিয়োগ না করতে চান তবে আপনি যেকোনো ব্যাংকের অধীনে এসআইপি অ্যাকাউন্ট ওপেন করে তাতে যথেষ্ট পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগ করতে পারেন। এসআইপি অ্যাকাউন্টে জমা হওয়া এই অর্থ ইক্যুইটি, ঋণ এবং মিশ্র তহবিলে বিনিয়োগ করা হয়ে থাকে, যা আগামীতে যথেষ্ট ভালো পরিমাণ রিটার্ন পেতে সাহায্য করে।

কন্যা সন্তানের ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত করার জন্য অনেক ক্ষেত্রেই তার পিতা মাতা পোস্ট অফিসের রেকারিং ডিপোজিটের ক্ষেত্রেও বিনিয়োগ করে থাকেন। এক্ষেত্রে বিনিয়োগ সম্পূর্ণভাবে নিরাপদ এবং পরবর্তীতে নিশ্চিত রিটার্ন পাওয়া যাবে। যদিও সাধারণত ৫ বছরের জন্য রেকারিং ডিপোজিট করা হয়ে থাকে, তবে আপনি দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগের মাধ্যমেও আপনার কন্যা সন্তানের ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত করতে পারেন।

এসমস্ত স্কিমের পাশাপাশি আপনি দীর্ঘ ১৫ বছরের জন্য পাবলিক প্রভিডেন্ট ফান্ড অ্যাকাউন্টে বিনিয়োগের মাধ্যমে আপনার কন্যা সন্তানের ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত করতে পারেন, এমনকী আপনি চাইলে ২০ বছরের জন্য পিপিএফ অ্যাকাউন্টে বিনিয়োগ করতে পারেন। ভারতের যেকোনো ব্যাংক অথবা পোস্ট অফিসের অধীনে আপনি পিপিএফ-এর আওতায় অ্যাকাউন্ট ওপেন করতে পারেন এবং সর্বনিম্ন ৫০০ টাকা থেকে বিনিয়োগ শুরু করতে পারেন। এক্ষেত্রে ১ বছরে সর্বাধিক ১.৫ লক্ষ টাকা বিনিয়োগ করতে পারবেন একজন গ্রাহক। পিপিএফ-এর অধীনে কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে ৭.১০ শতাংশ হারে সুদ প্রদান করা হয়ে থাকে। সুতরাং, আপনি যদি ১৫ বছর কিংবা ২০ বছরের জন্য পিপিএফ-এর অধীনে বিনিয়োগ করেন তবে আগামীতে আপনি যথেষ্ট মোটা অংকের টাকা রিটার্ন পেতে চলেছেন।

অনেক ক্ষেত্রেই কন্যা সন্তানের পিতা অথবা মাতা তার জন্য সরাসরি কোনোক্ষেত্রে বিনিয়োগ না করে সোনার জিনিসপত্রে বিনিয়োগ করতে চান। তবে বিশেষজ্ঞদের মতানুসারে, সোনার গহনায় বিনিয়োগ করার চেয়ে গোল্ড ইটিএফ-এ বিনিয়োগ যথেষ্ট বেশি কার্যকরী। শেয়ার মার্কেট-এর মতই এক্ষেত্রেও বিনিয়োগ করলে প্রচুর টাকা রিটার্ন পাওয়া যেতে পারে, এমনকী বাজারে সোনার বাজারদর বাড়লে গোল্ড ইটিএফ-এর মূল্যও বাড়বে।

ভারত জুড়ে এই মূল্যবৃদ্ধির বাজারে নিজের কন্যা সন্তানের ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত করার জন্য অধিকাংশ পিতামাতায় বিভিন্ন ব্যাংক কিংবা পোস্ট অফিসের ফিক্সড ডিপোজিট স্কিমগুলিতে বিনিয়োগ করে থাকেন। এক্ষেত্রে যেহেতু মেয়াদ পূরণের পূর্বে টাকা তোলা সম্ভব নয় তাই দীর্ঘকালীন বিনিয়োগের মাধ্যমে আপনারা ফিক্সড ডিপোজিট থেকে প্রচুর টাকা রিটার্ন পেয়ে যেতে পারেন।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *