ট্রেন্ডিং

গরমে ফর্সা হওয়ার উপায়। উজ্জ্বল ত্বকের জন্য কার্যকরী ঘরোয়া টিপস ও প্রাকৃতিক পরিচর্যার কৌশল

সৌন্দর্যের যদিও কোন মাপকাঠি হয় না, তবুও ফর্সা রংকে সৌন্দর্যের মাপকাঠি হিসাবে ধরা হয়। ফর্সা হওয়ার উপায় এই কারণের জন্যই অনেকে জানতে চায়। একেক জন মানুষের গায়ের রং কি রকম হবে, সেটি তার বংশের ওপরে নির্ভর করে। যদিও প্রত্যেকটি মানুষ চায় তাকে সব থেকে সুন্দর দেখতে লাগুক। এই ফর্সা হওয়ার দৌড়ে বাজারে কিনতে পাওয়া যায় বিভিন্ন প্রোডাক্ট, যেই গুলি দিয়ে ফর্সা হবেন এমনটাই বলা হয়ে থাকে!

ফর্সা হওয়ার উপায় ছেলেদের ও মেয়েদের জন্য

যদিও দেখা যায় এই সমস্ত প্রোডাক্ট ব্যবহারের ফলে ত্বক ফর্সা হওয়ার পরিবর্তে ত্বক আরো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আপনি যদি আপনার ত্বকের উজ্জ্বল্য বাড়াতে চান, তাহলে কোন রকম প্রোডাক্ট ব্যবহার না করেও ঘরে থাকা বিভিন্ন উপাদান দিয়ে আপনার ত্বকের উজ্জ্বল্য বাড়াতে পারেন। যদিও একজন ব্যক্তি সম্পূর্ণভাবে ফর্সা হয়ে উঠবে না, তবুও তার জন্মের সময়ের রঙের মত সে পেতে পারবে এমনটাই মনে করেন অনেক বিশেষজ্ঞরা।

How Can i Get Fair Skin?

তবে ঘরে থাকা এই উপাদান গুলি সপ্তাহে বেশ কয়েকদিন ব্যবহার করলে আপনার ত্বকের উজ্জ্বলতা আগের থেকে অনেক বৃদ্ধি পাবে। আজকের এই প্রতিবেদনে থাকছে, ঘরে থাকা কি কি উপাদান দিয়ে আপনার ত্বকের জেল্লা আগের থেকে বাড়াতে পারবেন। যদি এই রকমই একটি প্রতিবেদনের খোঁজ করে থাকেন, তাহলে আর দেরি না করে সম্পূর্ণ প্রতিবেদনটি মনোযোগ সহকারে পড়ে ফেলুন এই ফর্সা হওয়ার উপায়।

Glowing Skin Home Remedies

১) Tomato & Oatmeal :- আমাদের প্রত্যেকের বাড়িতেই টমেটো এই সবজিটি থাকে। টমেটো যেমন খেলেও শরীরের পক্ষে অনেক উপকারী, ঠিক তেমনি এটি ত্বক পরিচর্যার ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হিসেবে ব্যবহৃত হয়। টমেটো এবং তার সাথে যদি ওঠ মিল এক সঙ্গে একটি প্যাক বানিয়ে ব্যবহার করতে পারেন, তাহলে ত্বকে এটি স্ক্রাবের মতন কাজ করবে। এই মিশ্রণটি কয়েক মিনিট সার্কেলভাবে ত্বকে মাখতে হবে, তারপরে কুড়ি মিনিট রেখে দিন। এরপরে ঠান্ডা জল দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। যদি দুই সপ্তাহ ব্যবহার হয় প্যাকটি, তাহলে ত্বকের উজ্জ্বলতা আগের থেকে অনেক বেড়ে যাবে, সেই সাথে ত্বক আগের থেকে অনেক সজিব দেখাবে।

ফর্সা হওয়ার উপায় কি?

২) Haldi or Turmeric :- হলুদ এমন একটি প্রাকৃতিক উপাদান, যেটি শরীরের বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে, এছাড়া হলুদ ত্বক ফর্সা করার ও ত্বকের স্থিতিস্থাপকতা বাড়িয়ে স্কিন টোন ভালো করার একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। বিভিন্ন সামাজিক কাজে যেমন – বিবাহ, অন্নপ্রাশনে সমস্ত শুভ অনুষ্ঠানে হলুদ ছোয়ানোর একটা নিয়ম দেখা যায়। হলুদ ব্যবহার করার নিয়ম সব থেকে ভালো হবে, যদি হলুদ পাউডারের সাথে একটু লেবুর রস মিশিয়ে নিয়ে এবং এই মিশ্রণটি আপনার ত্বকের উপরে লাগিয়ে 15 মিনিট রেখে দিন। উষ্ণ গরম জল দিয়ে ত্বক ধুয়ে নিতে হবে। এভাবে সপ্তাহে দুই থেকে তিনবার লাগালে ত্বক আগের থেকে অনেক ফর্সা এবং সজীব ও উজ্জ্বল হবে।

দীপ্তিময় ও ফর্সা ত্বকের রহস্য!

৩) Rose Water :- গোলাপ জল ভিটামিন এবং অ্যান্টি অক্সিডেন্ট দ্বারা সমৃদ্ধ একটি উপাদান। এই উপাদান ত্বককে কোমল এবং মোলায়েম রাখতে সাহায্য করে। বাজার থেকে কেনা গোলাপ জল পাওয়া যায়, সেটিও কেনা যেতে পারে, এছাড়া আরেকটি পদ্ধতিতে গোলাপ জল বানিয়ে নেওয়া যায়। এর জন্য সর্বপ্রথম চার চামচ জল আধ ঘন্টার জন্য উষ্ণ জলে ভিজিয়ে দিন। আধ ঘন্টা হয়ে যাবার পর তা জল থেকে বের করে নিন এবং তাতে গোলাপ জল এবং অর্ধেক চামচ দই মেলান। এবার এই পেস্ট ত্বকের উপর লাগিয়ে কুড়ি মিনিট রেখে ঠান্ডা জল দিয়ে ধুয়ে নিন।

Fair Skin Tips

৪) Orange :- এটি একটি ভিটামিন সি সমৃদ্ধ ফল। কমলালেবু শরীরের পক্ষে অনেক ভালো ফল দেয়, ঠিক তেমনি কমলালেবুর রসের সাথে হলুদ গুঁড়া মিশিয়ে একটি প্যাক তৈরি করে মুখে মাখতে পারেন। সারারাত এইভাবে মেখে ঘুমিয়ে পড়তে পারেন। ঘুম থেকে উঠে উষ্ণ জল দিয়ে আপনার ত্বক ধুয়ে নিন। এইরকম ভাবে পেস্ট তৈরি করে মুখে মাখলে অনেক ভালো ফল পাবেন ও এই ফর্সা হওয়ার উপায় অবশ্যই ব্যবহার করুন।

Glowing Skin Tips

৫) Yashtimadhu :- যষ্টিমধু বা মুলেঠি অনেক রোগের জন্য ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এটি রোদে পোড়া ত্বক, র‍্যাস, ডার্কনেস কমাতে সাহায্য করে। যষ্টিমধু যদি রাতে ঘুমানোর আগে রসে তুলো চুবিয়ে ত্বকের উপর লাগাতে পারেন এবং পরদিন সকালে ত্বকে উষ্ণ গরম জল দিয়ে ধুয়ে নিন, তাহলে খুব ভালো ফল পাবেন। এভাবে প্রত্যেক দিন যদি এই নিয়ম পালন করেন তাহলে ত্বক অল্প দিনের মধ্যেই ভালো হয়ে উঠবে।

৬) Lemon :- লেবু খুব সহজ পদ্ধতিতে ত্বকের ফর্সা বাড়ানোর কাজ করে থাকে। ত্বকের ভেতরের অংশ সুন্দর করতেও লেবুর জুড়ি মেলা ভার। লেবু ত্বকের যে কোন দাগ ছোপ দূর করতে অনেকটাই সাহায্য করে। প্রত্যেকদিন স্নানের আগে লেবুর রস ত্বকের উপর যদি লাগাতে পারেন এবং এইভাবে যদি ২০ মিনিট রেখে দিতে পারেন, তারপর ঠান্ডা জল দিয়ে ধুয়ে নেন তাহলে ত্বকে থাকা দাগ আগের থেকে অনেকটাই হালকা হয়ে আসবে।

ফর্সা হওয়ার উপায় সহজ

৭) Chickpea Flour :- প্রত্যেকের ঘরেই বেসন থেকেই থাকে। আগেকার যুগ থেকেই বেসন দিয়ে রূপচর্চা করার ব্যাপারটি হয়ে আসছে। বাজারে কিনতে পাওয়া বেসন যদি আপনি প্রত্যেকদিন স্নানের আগে বেসন ও হলুদ গুঁড়ো সহযোগে মিশিয়ে পেস্ট বানিয়ে আপনার মুখে মাখতে পারেন এবং কুড়ি মিনিট রেখে উষ্ণ গরম জল দিয়ে ধুয়ে নিন, তাহলে আপনার ত্বকে থাকা দাগ খুব সহজেই দূর হয়ে যাবে।

৮) Walnut :- আখরোট ভিটামিন,প্রোটিন দিয়ে ভরপুর থাকে যা ত্বককে স্বাস্থ্যকর ফর্সা এবং চমৎকার হতে সাহায্য করে। জলে ভেজানো বাদাম ও আখরোট আমরা শরীর স্বাস্থ্য ভালো হওয়ার জন্য খেয়ে থাকি। অনুরূপভাবে যদি জলে ভেজানো বাদাম বা আখরোট আমরা মিক্সচারে দিয়ে তার মধ্যে একটু দই এবং তিসি মেশানো যায়। এভাবে একটি মিশ্রণ তৈরি করে যদি এটা ত্বকের উপর লাগিয়ে ১০ মিনিট পর্যন্ত রেখে দেওয়া হয় তারপর ঠান্ডা জল দিয়ে পরিষ্কার করে নিলেই ত্বক অনেকটাই ফর্সা হয়ে উঠবে।

Fair Skin & Glowing Skin for Male and Female

৯) Aloevera :- অ্যালোভেরা জেল বাজারে কিনতে পাওয়া যায় সেই জেল ঘুমোতে যাওয়ার আগে লাগাতে পারেন, এছাড়া বাড়িতে অ্যালোভেরা গাছ থাকলে সেই এলোভেরা গাছের থেকেও জেল তৈরি করে নিতে পারেন। অ্যালোভেরা জেল ত্বককে ফর্সা হওয়ার উপায় সহজ ঘরোয়া পদ্ধতি, কারণ এন্থ্রাক্যুনোন কম্পাউন্ড নামক একটি উপাদান থাকে, যেটি ত্বকের বাইরের লেয়ার সরিয়ে ভেতরে থাকা ত্বককে বাইরে বেরিয়ে আসতে সাহায্য করে। প্রত্যেকদিনই ঘুমোনোর আগে অ্যালোভেরা জেল লাগিয়ে ঘুমোতে পারেন। ঘুম থেকে উঠে হালকা ঠান্ডা জল দিয়ে মুখ ধুয়ে নিতে হবে।

১০) Honey & Lemon :- লেবুতে ভিটামিন সি থাকে যা আপনার ত্বককে ফর্সা বানায় এবং মধু ত্বককে মোলায়েম বানাতে সাহায্য করে। চার চামচ মধুতে চার চামচ লেবুর রস ভালো করে মিশিয়ে একটি মিশ্রণ তৈরি করুন, তারপর এই মিশ্রণটি ত্বকের উপর লাগিয়ে কুড়ি মিনিট রেখে দিন। উষ্ণ গরম জল দিয়ে ধুয়ে নিলেই অনেক ভালো ফল দেখা দেবে। সপ্তাহে তিনবার এই মিশ্রণটি ব্যবহার করলে আগের থেকে আরো অনেক ফর্সা হয়ে উঠবে।

১১) Rice Powder :- চালের গুড়ার মধ্যে প্যারা-অ্যামিনোবেঞ্জোয়িক অ্যাসিড থাকে, যা আপনার ত্বককে সূর্য থেকে বাঁচানো ছাড়াও শরীরে ভিটামিন সি এর স্তর অটুট রাখে। চালের গুঁড়ো তে ভিটামিন সি, ভিটামিন ই, অ্যান্টি অক্সিডেন্ট এবং ফেরুলিক এসিড দ্বারা ভরপুর থাকে, চালের গুড়ো ত্বকে আদর রাখতে সাহায্য করে। কাঁচা চাল বেটে নিয়ে একটি পাউডার তৈরি করে নিন, তারপর এই পাউডারের মধ্যে সমপরিমাণ দুধ মেশান। এরপর এই মিশ্রণটি ভালোভাবে লাগিয়ে আধঘন্টা পরে ঠান্ডা জল দিয়ে ধুয়ে নিন।

১২) Beetroot & Spinach :- বীট-পালং আয়রন এবং ভিটামিন দিয়ে ভরপুর, এটি ত্বকের ছিদ্র পরিষ্কার করে এবং ত্বককে প্রাকৃতিক ফর্সা করে তোলে। এটা ব্যবহারের নিয়ম হলো – চার চামচ বেসন, ২ চামচ হলুদ পাউডার এবং টাটকা ক্রিম নিন। এরপর বীট-পালং নিয়ে মিক্সার এর মধ্যে মেশাতে হবে। এরপর যে রস হবে, সেটি বাটিতে ঢেলে দিন। হলুদের পর এর মধ্যে বেসন হলুদ এবং ক্রিম ঢেলে একটি পেস্ট তৈরি করে নিন। এবার এই পেস্ট কে ত্বকের উপর কুড়ি মিনিট রেখে ঠান্ডা জল দিয়ে ধুয়ে দিন এটি একটি অন্যতম ফর্সা হওয়ার উপায়।

বাড়িতে বসেই স্বাস্থ্যকর পদ্ধতিতে ওজন কমানোর উপায়। নারী ও পুরুষদের জন্য খাবার ডায়েট ও ব্যায়াম টিপস জেনে সর্বদা ফিট থাকুন

উপরে দেওয়া ফর্সা হওয়ার উপায় করলে ত্বক দুই থেকে তিন সপ্তাহের মধ্যে আগের থেকে অনেক বেশি ফর্সা, নমনীয়, আদ্র ও উজ্জলতা ফিরে পাবে। বাজারে কিনতে পাওয়া যে কোন প্রোডাক্টের থেকে শতগুণ ভালো এই ঘরোয়া উপাদান গুলি দিয়ে রূপচর্চা করার ফর্সা হওয়ার উপায়। এতে কোন রকম সাইড এফেক্ট থাকবে না, তার জন্য ত্বক কখনোই এফেক্টেড হবে না।
Written by Shampa Debnath

Related Articles