সুখী মন ও সুস্থ জীবন যাপনের উপায়ের গোপন রহস্য। স্ট্রেস মুক্ত থাকার সহজ কৌশল

সুখী মনে ভগবানের বাস! এই কথাটি আমরা অনেকেই জানি, আর এর মাধ্যমে যে সুস্থ জীবন যাপন করা সম্ভব মন এবং শরীর একে অন্যের পরিপূরক। শরীর ভালো না থাকলে মনের ওপর তার প্রভাব পড়ে, অনুরূপভাবে মন ভালো না থাকলেও শরীরের উপর তার ছাপ পড়ে। প্রত্যেক মানুষ শরীর অসুস্থ হলে যত দ্রুত সম্ভব যেভাবে ডাক্তারের কাছে ছুটে যান, অনুরূপভাবে মন খারাপ হলে কিংবা মানসিক স্বাস্থ্য বিঘ্নিত হলে ডাক্তারের কাছে যাওয়ার চিন্তাভাবনাও করে ওঠেন না।
সুখী মন ও স্ট্রেস মুক্ত থাকার সহজ উপায় জেনে নিন
একজন ব্যক্তির শরীর এবং মন দুটোই একই সাথে সুস্থ রাখার প্রয়োজন রয়েছে। আজকের এই প্রতিবেদনে আপনি কিভাবে মন সুস্থ রাখবেন তার জন্য কিছু টিপস দেওয়া রয়েছে, যেগুলি ফলো করলে আপনার মানসিক স্বাস্থ্য অনেকটাই সুস্থ ও স্বাভাবিক থাকবে। মন ভালো না থাকলে কাজ করার এনার্জি পাওয়া যায় না, সেই সাথে শরীরের সেই চাঙ্গা ভাবটা কোথাও গিয়ে একটু শিথিল হয়ে যায়।
Happy Mind Quotes
এই জন্য আপনার সুখী মন কিভাবে সতেজ ও ফুরফুরে রাখবেন তা জানা আপনার আবশ্যিক দরকার। বর্তমান সময়ে দাঁড়িয়ে মানসিক রোগ এক ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। বিশেষ করে ডিপ্রেশন নামক রোগ এখন ঘরে ঘরে। আপনার মন যদি পরপর অনেকদিন ধরে খারাপ থাকে তাহলে আপনি একটা সময় গিয়ে ডিপ্রেশনের শিকার হয়ে যাবেন। এজন্য আপনার মনকে খুব তাড়াতাড়ি সক্রিয় করে তুলুন।
সুখী মন ভালো রাখার ৫টি অব্যর্থ উপায়
শারীরিকভাবে সক্রিয় থাকুন :- শরীর ও মন উভয় সুস্থ রাখতে আপনার প্রতিদিনের রুটিনে শারীরিক ব্যায়াম রাখুন। নিয়মিতভাবে সকালে অথবা বিকেলে হালকা ওয়ার্ক আউট, হাটাহাটি বা জগিং, সাইক্লিং করলে আপনার শরীর চাঙ্গা থাকবে। দরকার পড়লে আপনি ১০ থেকে ১৫ মিনিট ধ্যান করুন। যেটি আপনার মনকে শান্ত রাখতে সাহায্য করবে সেই সাথে আপনার আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি পাবে।
সামাজিকভাবে সংযোগ করুন :- আগেকার সময়ে একসাথে বসে অনেক জন মিলে যে আড্ডা বা গল্প হতো তাতে একটা সামাজিক বন্ধন দৃঢ় হতো। বর্তমান তথ্য প্রযুক্তির যুগে প্রত্যেকটি মানুষ সামাজিক বন্ধন থেকে দূরে সরে গিয়ে মোবাইল ফোনে অর্থাৎ ফেসবুক, ইন্সটাগ্রাম, হোয়াটস অ্যাপ, মেসেঞ্জারের মতো প্ল্যাটফর্মে দিনের বেশিরভাগ সময় কাটায়। এর ফলে বর্তমান যুগের তরুণ তরুণীরা চার দেয়ালের বাইরে গিয়ে খেলাধুলা, বন্ধু বান্ধব ও প্রতিবেশীদের সাথে মেলামেশা প্রায় বন্ধ করিয়ে দিয়েছে।
মানসিক সুস্থতা ও সুখের সহজ মন্ত্র
সামনা সামনি যে আড্ডা বা গল্পের মাধ্যমে একজনের সাথে অন্য জনের কথাবার্তার মাধ্যমে যে সামাজিক বন্ধন দৃঢ় হয় ও সুখী মন ভালো থাকে। তার ফলে মনের মধ্যে জমানো কথার আদান প্রদানের মাধ্যমে মন ভালো হয়। সারাদিনের কর্ম ব্যস্ততার বাইরে গিয়ে কিছুটা সময় বের করে পরিবার, বন্ধু বান্ধব ও প্রতিবেশীদের সাথে সময় কাটান, আড্ডা দিন, হাসি খুশিতে মেতে উঠুন।
ধ্যান করুন :- যোগ ব্যায়াম মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখার অন্যতম উপায়। নিয়মিত মেডিটেশন বা ধ্যান করলে মন শান্ত থাকে এবং মানসিক চাপ দূর হয় ও সুখী মন থাকে। আপনার যদি ধ্যান কিভাবে করবেন তা জানা না থাকে, তাহলে ইউটিউবে অসংখ্য ভিডিয়ো রয়েছে ধ্যানের। এই গুলো আপনার কাজে আসতে পারে। ধ্যান করলে আপনার মনের শান্তি আসবে, ধৈর্য বাড়বে, দুশ্চিন্তা দূর হবে, ঘুম ভালো হবে সর্বোপরি আপনার মন ভালো থাকবে।
আপনার অনুভূতি শেয়ার করুন :- আপনার মধ্যে জমে থাকা কষ্ট, দুঃখ অভিমান মনের মধ্যে পুষে না রেখে আপনার কাছের বন্ধু বান্ধব বা প্রিয়জনকে শেয়ার করুন। মনের মধ্যে জমে থাকা কষ্ট, দুঃখ যদি কোন ব্যক্তির সাথে শেয়ার না করেন তাহলে সেটা আপনার মনে একটা খারাপ প্রভাব ফেলবে, যেখান থেকে আপনার মনের ডিপ্রেশনের শুরু হতে পারে। এইজন্য আপনার মনের অনুভূতি আপনার কাছের মানুষের কাছে শেয়ার করুন এতে আপনার সুখী মন ভালো থাকবে।
স্বাস্থ্যকর খাবার খান :- মনের সাথে শরীরের একটা সুনিবিড় সম্পর্ক রয়েছে। দৈনন্দিন কাজ করার জন্য শরীরে শক্তি প্রয়োজন হয় আর এই শক্তির মূল উৎস হচ্ছে খাবার। প্রতিদিন সুষম খাদ্য গ্রহণ করতে যেরকম শরীর ভালো থাকে, অনুরূপভাবে সুষম খাবার আপনার মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখার জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।
সুখী মন গড়ার বিজ্ঞানসম্মত কৌশল
শখের কাজ করুন :- মন বা মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখার জন্য আপনার পছন্দের কাজকর্ম গুলো আপনার দৈনন্দিন রুটিন এর মধ্যে এক ঘন্টা হলেও রাখুন। যদি আপনি ভাল আঁকতে পছন্দ করেন বা কবিতা লিখতে পছন্দ করেন কিংবা গার্ডেনিং করতে ভালোবাসেন তাহলে আপনার দৈনন্দিন জীবনে কর্মব্যস্ততার মধ্যেও এক ঘন্টার জন্য হলেও এই সমস্ত কাজে সময় দিন। এতে আপনার সুখী মন ও মানসিক স্বাস্থ্য ভালো থাকবে।
নিজের জন্য সময় বের করুন :- প্রত্যেকটি ব্যক্তি কিছু না কিছু নিয়ে ব্যস্ত থাকে। কেউ চাকরি নিয়ে, কেউ পড়াশোনা নিয়ে বা কেউ ক্যারিয়ার নিয়ে। একই বিষয় নিয়ে ব্যস্ত থাকলে মাথার মধ্যে একই রকম চিন্তার উদ্বেগ আসে। এই সমস্ত চিন্তার বাইরেও নিজের জন্য কিছুটা সময় বার করুন। একজন মানুষের সারাদিনের মধ্যে নিজের জন্য হলেও এক ঘন্টা সময় দেওয়া অত্যন্ত জরুরী। এই এক ঘন্টা সময় শুধুমাত্র নিজের পছন্দের গান বা পছন্দের মুভি কিংবা শপিং যেটা আপনার পছন্দ আপনি করতে পারেন। এতে আপনার মন হালকা হবে ও আনন্দিত হবে।
পর্যাপ্ত ঘুম :- শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য পর্যাপ্ত ঘুম খুবই প্রয়োজনীয়। পর্যাপ্ত ঘুমের অভাবে চোখের সমস্যা, সারাদিন ক্লান্তির অনুভব করা ও মেজাজ খিটখিটে হওয়া এছাড়া চোখের নিচে দাগ ও মানসিক স্বাস্থ্য অবনতি হতে পারে। এজন্য নিয়ম করে প্রত্যেকদিন ৬ থেকে ৭ ঘন্টা পর্যাপ্ত ঘুমানো খুবই দরকার।
সুখী মন ও মানসিকভাবে শক্তিশালী থাকার উপায়
মোবাইল ফোনের ব্যবহার কমান :- বর্তমান সময়ে দাঁড়িয়ে মোবাইল ফোনের আসক্তি একটি সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাচ্চা থেকে বয়স্ক প্রত্যেকেই মোবাইল ফোনে অ্যাডিক্টেড হয়ে যাওয়ার জন্য বাচ্চাদের পড়াশোনার ক্ষতি হচ্ছে, সেই সাথে বড়দেরও মনের ওপর অনেক সময় প্রভাব পড়ছে। এজন্য দিনের মধ্যে নির্দিষ্ট সময় বেঁধে নিয়ে মোবাইল দেখা উচিত।
গরমে ফর্সা হওয়ার উপায়। উজ্জ্বল ত্বকের জন্য কার্যকরী ঘরোয়া টিপস ও প্রাকৃতিক পরিচর্যার কৌশল
প্রয়োজনে সহযোগিতা নিন :- আপনি যদি মানসিক সমস্যা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে ভোগেন, তাহলে আপনার কাছের মানুষের সাথে আলাপ আলোচনা করুন, খুবই দরকার পড়লে কাছাকাছি কোন মানসিক চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। এতে আপনার অনেকটাই উপকার হবে। উপরে বর্ণিত প্রত্যেকটি টিপস যদি আপনি ফলো করতে পারেন তাহলে আপনার শারীরিক স্বাস্থ্যের পাশাপাশি মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি হবে।
Written by Shampa debnath



